সাইনবোর্ড ও প্যাকেটের গায়ে লেখা আছে “পুরাতন ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হাজী বিরিয়ানি হাউস”। বিরিয়ানী তৈরিতে পোড়া ও নিন্মমানের পাম তেল ব্যবহার করছে “ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হাজী বিরিয়ানীর” নামে ফেনীর তিনটি শো-রুমের নকল হাজী বিরিয়ানি। কিন্তু পুরাতন ঢাকার হাজী বিরিয়ানির স্পেশালিটি হচ্ছে ওরা বিরিয়ানি রান্নায় ঘি বা বাটার অয়েলের পরিবর্তে শুধু সরিষার তেল ব্যবহার করে।
এছাড়াও হাজী বিরিয়ানি প্রস্তুত হয় শুধু খাসির মাংস দিয়ে, অন্য কোনো মাংস দিয়ে এই বিরিয়ানি প্রস্তুত করা হয় না। ফেনীর মহিপাল, ট্রাংক রোড ও এসএসকে রোডের হাজী বিরিয়ানির শো-রুমে গরুর বট, মরা মুরগি ও বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার থেকে বেচে যাওয়া উৎসৃষ্ট মাংস ক্রয় করে এ বিরিয়ানিতে ব্যবহার করারও অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় জনসাধারণ, দর্শনার্থী ক্রেতারা আসল হাজী বিরিয়ানির স্বাদ দেখতে ‘ঢু’ মারেন নকল করা নামের এই মিনি রেস্তোরাঁয়।
বিরিয়ানির স্বাদ নেয়া শেষে তৃপ্তির ঢেঁকুরতো দূরে থাক খাবারের পয়সা উসুল হলো কিনা সেটা নিয়ে ভাবতে বসেন অনেকেই। এইসব অসাধু ব্যবসায়ীরা পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবারের প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে ক্রেতাদের প্রতারিত করে আসছেন অহরহ।
ক্রেতারা না বুঝেই নাম নকল করা হাজী বিরিয়ানি স্বাদ নিতে রেস্তোয়াঁয় ঢুকে নিম্নমানের খাবার খেয়ে প্রতারিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এতে করে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো সম্পর্কে তাদের মনে বিরূপ ধারণাও তৈরি হচ্ছে। ফেনীর ৩টি শো-রুমের হাজী বিরিয়ানি নামের যে রেস্তোরাগুলো আছে সেগুলো কিন্তু আসল হাজী বিরিয়ানি নয়। মহিপাল শো-রুমে হাজী বিরিয়ানী খেতে আসা দেলোয়ার হোসেন নামের এক ভদ্রলোক জানান, ব্যবসা বাড়ানোর জন্য মালিক হাজী বিরিয়ানির নাম দিয়েছে।
এটা আসল হাজী বিরিয়ানি নয়। পুরান ঢাকার আসল হাজী বিরিয়ানি কেমন, তা দূর থেকে গন্ধ শুকেই বলে দেয়া যায় এটা ঐতিহ্যবাহী হাজী বিরিয়ানি। ফেনীর হাজী বিরিয়ানি বলে যেটা বিক্রি হচ্ছে তার না আছে সেই ঘ্রাণ, না আছে সেই স্বাদ। এখানে শুধু শুধু পয়সা নষ্ট করে সুগন্ধযুক্ত কেমিক্যাল খেয়ে স্বাস্থ্যে রোগবালাই সৃষ্টি করা ছাড়া আর কিছুই নয়।
গত ১৭ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজীতে উদ্বোধন হয় হাজী বিরিয়ানীর আরেকটি শো-রুমের। সেখানেও বাসি ও গরুর বট দিয়ে তেহেরী তৈরীর অভিযোগে ভোক্তাদের তোপের মুখে পড়েন সোনাগাজী শো-রুমের হাজী বিরিয়ানী কর্তৃপক্ষ। আসল না নকল এ বিষয়ে মহিপাল শো-রুমের প্রধান কর্মচারী মিন্টু বাবুর্চির চাচাতো ভাই জুয়েলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আসল হাজী বিরিয়ানী এখানে আমরা অনুমতি ছাড়া তৈরী করতে পারবো না। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী সেই বিরিয়ানীর স্বাদতো যেভাবেই হোক দিচ্ছি। সুগন্ধযুক্ত কেমিক্যাল আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি উত্তর না দিয়ে চলে যান।
এ ব্যাপারে ফেনী হাজী বিরিয়ানির মালিক মিন্টু বাবুর্চির কাছে হাজী বিরিয়ানি সম্পর্কে জানতে চাইতে তিনি স্বীকার করে বলেন ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ‘হাজির বিরিয়ানি’ আর ফেনীর মিন্টু বাবুর্চির ‘হাজী বিরিয়ানী’ এক নয়। গরুর বট, মরা মুরগি ও কমিউনিটি সেন্টারের উৎসৃষ্ট সামগ্রী ক্রয় করে বিরিয়ানী তৈরির করার কথা অস্বীকার করেন মিন্টু বাবুর্চি। ফেনীর হাজী বিরিয়ানী কোথায় তৈরি হয় জানতে চাইলে তিনি কখনো নাজির রোড, কখনো মহিপাল রোড আবার কখনো মিজান রোড বলে জানান।
এক পর্যায়ে তিনি ফেনীর তেমন কিছু চিনি না বলে বিরিয়ানি তৈরির সঠিক তথ্য না দিয়ে এড়িয়ে যান। উলেখ্য, পুরান ঢাকার মানুষের হাজারো খাবার তালিকায় নিঃসন্দেহে বিরিয়ানি প্রথম সারিতেই রয়েছে। পুরান ঢাকার খাবার তালিকায় বিরিয়ানি হওয়ার অনেক কারণও রয়েছে। মোগল আমল থেকে ঐতিহ্যগতভাবেই এ এলাকার মানুষের খাবার-দাবারে ছিল বেশ নবাবি সংস্কৃতি। সেই ঐতিহ্য পুরান ঢাকাবাসী আজও ধরে রেখেছে।
আর এই খাবার সরবরাহে বেশকিছু জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে হাজী বিরিয়ানি অন্যতম। কারণ হাজী মোহাম্মদ হোসেনের বিরিয়ানি নামটার খুব একটা প্রচলন নেই, এর প্রচলিত নাম হচ্ছে হাজী বিরিয়ানি। ঢাকার বংশাল থানাধীন নাজিরা বাজারের ৭০ কাজী আলাউদ্দিন রোডে অবস্থিত হাজি বিরিয়ানির কথা।
১৯৩৯ সাল থেকে এই বিরিয়ানির যাত্রা শুরু এবং এখনো চলছে গৌরবের সঙ্গে, ঐতিহ্যের সঙ্গে। বংশপরম্পপনায় এই ব্যবসায় দীর্ঘদিন ধরে রেখেছেন হাজী মো. হোসেনের পরিবারের লোকজন। মরহুম হাজি মোহাম্মদ হোসেনের মৃত্যুর পর এই ব্যবসার হাল ধরেন তারই পুত্র হাজি গোলাম হোসেন।
২০০৬ সালে হাজী গোলাম হোসেনের মৃত্যুর পর তার পুত্র হাজী মো. শাহেদ হোসেন এই ব্যবসার হাল ধরেন। এখন এই ব্যবসা দেখাশোনা করেন হাজী মোহাম্মদ বাপী যিনি মরহুম হাজী মো. হোসেনের নাতি হন সম্পর্কে।
নায়িকা দীঘির বিরুদ্ধে কোটি টাকার মামলা করবেন
স্বনামধন্য নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত মুক্তি প্রতীক্ষিত ছবি ‘তুমি আছো তুমি নেই’র পোস্ ...বিস্তারিত