
হকার্স রিপোর্ট ঃ ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি প্রতিষ্ঠান দেবপুর ইসলামিয়া সিনিয়র (ফাজিল) মাদরাসাটি দীর্ঘ ২২ বছর রহস্যজনক কারণে চলছে অধ্যক্ষ ছাড়াই। শিক্ষকের ৪টি পদ শূন্য হলেও যথাসময়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চাহিদাপত্র প্রেরিত না হওয়ায় সে পদগুলোও শূন্য রয়েছে।
প্রাপ্ত সংবাদে জানা যায়, ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ফেনীর ঐতিহ্যবাহী ও একসময়ের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেবপুর ইসলামিয়া সিনিয়র (ফাজিল) মাদ্রাসাটি। সে এলাকার মরহুম পীরে কামেল ইসমাইল দরবেশ (রহ:) কর্তৃক এ মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তার পুত্র মরহুম মাওলানা মোজাম্মেল হক ৪৪ বছর সুন্দর ও সফলভাবে মাদরাসাটি পরিচালনা করেন। অধ্যক্ষ মাওলানা মোজম্মেল হক ১৯৯৭ সালে অবসরে গেলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন মাদরাসা'র উপাধ্যক্ষ মাওলানা ওবায়দুল হক। তিনি দীর্ঘ ২২ বছরেও প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ নিয়োগে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন অধ্যক্ষ নিয়োগ না হওয়ায় শিক্ষকদের মাঝে গ্র“পিং ও লেখাপড়ার মান নিম্নমুখি হয়। স্থায়ী অধ্যক্ষ না থাকায় প্রতিষ্ঠানটিতে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে চলছে নানা রকম দ্বন্দ্ব। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে মাদরাসাটির অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছিলেন উপাধ্যক্ষ ওবায়দুল হক। দীর্ঘ ২২ বছর ওবায়দুল ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকাকালে তিনি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অধ্যক্ষ নিয়োগে প্রক্রিয়া গ্রহণ করেননি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
গত ২৯ ফেব্র“য়ারী ২০২০ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা ওবায়দুল হক অবসর গ্রহণ করেন। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন মাদরাসার সহযোগী অধ্যাপক মাওলানা ফয়েজ আহমেদ। এনিয়েও শিক্ষকদের মাঝে চলছে নানা ধরনের গুঞ্জন।
তথ্য মতে, প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে নূরানি শিশু শ্রেণী থেকে ফাজিল পর্যন্ত প্রায় ৪৫০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। কিন্তু অধ্যক্ষ না থাকায় নিয়মিতই প্রশাসনিক ও একাডেমিক নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাববকদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদরাসা'র একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, মাদরাসায় প্রায় ২২ বছর স্থায়ী কোন অধ্যক্ষ নেই। উপাধ্যক্ষ মাদরাসা'র অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু তিনি খুব কমই মাদরাসায় আসেন। ফলে শিক্ষার্থীদের যেকোনো প্রয়োজনে ফেনীতে তার বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে হয়। এ নিয়ে ভুক্তভোগীদের নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এছাড়া ও বিভিন্ন সার্টিফিকেট পেতেও ঝামেলায় পড়তে হয় বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এ বিষয়ে তাদের ভাষ্য, আমরা দীর্ঘদিন থেকেই প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যক্ষ নিয়োগ করার দাবি জানিয়ে আসছি। উপাধ্যক্ষ ও মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদ থেকে বিভিন্ন সময় এ ব্যাপারে আশ্বাস দেয়া হলেও এখনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি ও মহামায়া ইউপি চেয়ারম্যান গরীব শাহ হোসেন বাদশা চৌধুরীর। তিনি বলেন, এ মাদরাসায় দীর্ঘ সময় অধ্যক্ষ নিয়োগ না হওয়ার বিষয়ে তিনি অবগত আছেন। তিনি মাত্র এ পিরিয়ডের জন্য সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এসব বিষয়ে তার তেমন কিছু জানা নেই। সভাপতিই এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন।
২২ বছর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনকারী মাওলানা ওবায়দুল হক বলেন, ২২ বছর অধ্যক্ষ পদ খালি কিনা নথিপত্র দেখা ছাড়া আমি বলতে পারবো না। তবে অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য দু’দফা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছিল। প্রার্থী না থাকায় নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়।
বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা ফয়েজ আহাম্মদ বলেন, দীর্ঘদিন অধ্যক্ষের পদ শূন্য বলে তিনি অবগত আছেন। একই মাদরাসার সিনিয়র একজন প্রভাষক মোহাম্মদ উল্যাহ জানান, অধ্যক্ষের পদটি শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন এটি সত্য। মাদরাসাটি সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য অবিলম্বে অধ্যক্ষ নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া দরকার।
ছাগলনইয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কবির আহম্মদ বলেন, ওই মাদরাসায় অধ্যক্ষের পদ শূন্য আছে তা তিনি জানেন। তবে এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসের কোন করণীয় নেই। ফাজিল মাদরাসার নিয়ন্ত্রণ মাদরাসা বোর্ড ও ইসলামিক ইউনির্ভাসিটি করে থাকেন।
ফেনী আলীয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মাহমুদুল হাসান বলেন, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদ শূন্য হলে শূন্য পদ পূরণের জন্য সময় নির্ধারণ না থাকলেও দ্রুততম সময়ে শূন্য পদ পূরণের প্রবিধান উল্লেখ রয়েছে। কোন অবস্থাতে পদ শূন্য থাকা সঠিক নয়।
এ ব্যাপারে ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও দেবপুর ইসলামিয়া সিনিয়র (ফাজিল) মাদরাসা সভাপতি মোছা: সুমনি আক্তার দীর্ঘ ২২ বছর অধ্যক্ষ পদটি শূন্য থাকার বিষয়টি অবগত আছেন বলে নিশ্চিত করেন।
স্থানীয় পশ্চিম দেবপুর ও পূর্ব দেবপুর এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে দীর্ঘ ২২ বছর অধ্যক্ষ নিয়োগ না হওয়ার বিষয়ে তদন্ত এবং অবিলম্বে অধ্যক্ষ নিয়োগ গ্রহণের নিমিত্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষামন্ত্রী, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, ফেনী জেলা প্রশাসক, ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদন ও অনুলিপি প্রদান করেছেন। তারা আশাবাদী খুব শীঘ্রই মাদরাসায় অধ্যক্ষ ও শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে সরকার প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ ও পরিকল্পনায় সু-নজর রাখবেন বলে তাদের বিশ্বাস।