ইয়াছির আরাফাত রুবেল>>> ফেনীর পরশুরাম উপজেলার পৌর এলাকার বাউরখুমা আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী পরিবার গুলো দীর্ঘদিন ধরে মানবেতর জীবন যাপন করছে। পৌর এলাকার বাউরখুমা মৌজার ৪ একর ৮০ শতক জমিতে সরকার ২০০০/২০০১ অর্থ বছরে এই আশ্রায়ন নির্মান করে। প্রকল্পের কাজের বাস্তবায়ন করেছে সেনাবাহীনি । আওয়ামীলীগের তৎক্ষালীন শিক্ষামন্ত্রী এএসএইচকে সাদেক ২০০০ সালের ২২ জুলাই আশ্রায়ণ প্রকল্পটি উদ্বোধন করেছেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যবদি আশ্রায়ণের কোন মেরামত কাজ হয়নি বলে জানান বসবাসকারীরা। আশ্রায়নের ঘরের বেশীরভাগ ছাউনি, বেড়া, দরজা, জানালা সহ ঘরের সব কিছু নষ্ট হয়ে গেছে ব্যাবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে বর্তমানে বসবাসকারীরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। জানা যায় বর্তমানে ৬ টি টিউবওয়েল পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। টয়লেট গুলি নষ্ট হয়ে ব্যাবহার অনুপোযোগী অবস্থায় রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। বাসিন্দারা জানান ১০টি পরিবারের জন্য ১টি টয়লেট স্থাপন করা হলেও বর্তমানে সম্পুর্ন পরিত্যাক্ত অবস্থায় আছে। ভুমিহীন হাছিনা আক্তারকে ওই আশ্রায়নে ২০০০ সালে একটি ঘর বরাদ্ব দেন স্থানীয় প্রশাসন। গত ১৮ বছর যাবৎ হাছিনা আক্তার সেখানে বসবাস করে যাচ্ছেন। তার স্বামী মারা যাবার পর থেকে ৩ ছেলে ১ মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্টে সেখানে বসবাস করছেন । তিনি জানান আশ্রায়ণের ঘর নির্মানের পর থেকে অদ্যবদী কোন মেরামত কাজ করা হয়নি। বর্তমানে তারা টিনের চালের উপরে পলিথিন দিয়ে কোন মতে বসবাস করছেন। জানা গেছে, মৌলিক চাহিদার শুধুমাত্র বাসস্থানের ব্যবস্থা রয়েছে সেখানকার বাসিন্দাদের। তাও আবার দীর্ঘদিন মেরামত না করায় সবগুলো ঘরের টিনের চাল ও বেড়া নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতিটি ঘরের দরজা, জানালা, সম্পুর্ন ভেঙ্গে গেছে। জরাজীর্ণ ঘরে চালে পলিথিন দিয়ে মেরামত করে কোনোমতে বসবাস করছে। সরেজমিনে শনিবার২০ অক্টোবর আশ্রয়ন প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, এখানে বসবাস করছে ৬০ পরিবার। তাদের বেশির ভাগ ঘরের চালের ওপর ও নিচে নিজ খরচে পলিথিন দিয়ে বসবাস করছে। আবদুল জলিল ও আবদুল হান্নান সহ ভুক্তভোগীরা জানান, "সরকার তাদেরকে আশ্রায়ন প্রকল্পের আওতায় ২০০০ সালে ৬০টি পরিবারকে একটি ঘর ও জমি বরাদ্ধ দেয়। ঘর বরাদ্ধ দেওয়া সময় আশ্রয়ণ প্রকল্পে গভীর নলকূপ ও স্বাস্থাসম্মত স্যানিটেশেন ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন আমাদের বসবাস করা ঘর, নলকূপ ও স্যানিটেশন গুলো মেরামত না করায় এই গুলো ব্যবহার করার অনপুযোগী হয়ে পড়েছে"। এছাড়া ২০০০ সালের পর থেকে সরকারী কোন বরাদ্ধ পাননি বলেও অভিযোগ করেছেন তারা। পৌর কাউন্সিলর আবদুল মান্নান লিটন জানান "আশ্রয়ণ প্রকল্পের সবগুলি ঘরই বসবাসের উপযুক্ত নয়। জরাজীর্ণ ঘরগুলোর দ্রুত মেরামত প্রয়োজন। ২০০১ সালে আশ্রায়ন প্রকল্প হওয়ার পর আর কোন মেরামত না হওয়ার কারনে আশ্রায়ন প্রকল্পের এই জরাজীর্ন অবস্থা। এ ছাড়া আশ্রায়ন প্রকল্পের জন্য সরকারী আলাদা কোন বরাদ্ধ পাওয়া যায়নি। ভূমিহীন, গৃহহীন,দুর্দশাগস্থ্য ও ছিন্নমূল পরিবারের স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে ভূমির মালিকানা স্বত্বের দলিল/কবুলিয়ত সম্পাদন করা হয়েছে এই আশ্রায়ণে। তাদের সকলকেই রেজিষ্ট্রি ও নামজারী করে দেয়া হয়েছে। পুনর্বাসিত পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন উৎপাদনমুখী ও আয়বর্ধক কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহারিক ও কারিগরী প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তেমন কোন সুফল দেখা যায়নি। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের মধ্যে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করার কথা থাকলেও বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা গেছে উপজেলা সমবায় অফিস ৬ লাখ টাকা বিতরন করেছে কিন্তু ওই টাকা সুদ সহ দ্বিগুন হওয়ায় অনেক সদস্য ঋন দেয়ার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। পরশুরাম উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মিলন কান্তি জানান তাদের কে একবারই ৬ লাখ টাকা ঋন দেয়া হয়েছে তার পর থেকে আর কোন ঋন দেয়া হয়নি। পরশুরাম পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেল জানান তাদের কে নিয়মিত ভাবে বিজিএফ সহ বিভিন্ন ত্রান সামগ্রী পৌছে দেওয়া হয়েছে। এর আগে আশ্রায়নের একটি বেরাক আগুন লেগে পুড়ে যাওয়ায় তার ব্যাক্তিগত তহবীল থেকে মেরামত করে দেয়া হয়েছে। তিনি জানান আশ্রায়নের ঘর গুলি বর্তমানে ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে।