এস এম সায়েম ঃ দেখে বোঝার উপায় নেই, এটি ফুটপাত নাকি ব্যবসা কেন্দ্র। হাঁটার জায়গাজুড়ে পণ্যসামগ্রীর পসরা আর হকারদের ব্যস্ততা। পথচারীরা ফুটপাতে জায়গা না পেয়ে রাস্তায় হাঁটবেন, সেখানেও একই অবস্থা। রাস্তা দখল করে গাড়ি পার্কিং আর হকারদের ব্যবসা। এই হলো ফেনী শহর বিভিন্ন স্থানের ফুটপাতের অবস্থা। ছোট ছোট দোকান, ব্যবসা সামগ্রী আর হকারদের ঠেলে গন্তব্যে পৌঁছাতে প্রতিদিনই হয়রানি পোহাচ্ছেন পথচারীরা।
ফেনী শহরে ফুটপাতগুলো প্রতিনিয়ত হকাররা দখল করে রাখে। পথচারীদের চলাচলের একমাত্র পথ হচ্ছে এই ফুটপাত। অথচ এই ফুটপাত সবসময় হকারেরা দখল করে রাখে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ফেনী বড় জামে মসজিদ থেকে খেজুর চত্ত্বর পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে বিভিন্ন জায়গায় হকাররা বসে ফুটপাত দখল করে রেখেছে। দোয়েল চত্ত্বর থেকে মহিপাল পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে প্রায় শতাধিক হকার ফুটপাত দখল করে রেখেছে। একই অবস্থা খেজুর চত্ত্বর থেকে ফেনী মডেল থানা গেইট পর্যন্ত। বাদ পড়েনি জেল গেইট থেকে রেল গেইট এলাকাও। এছাড়াও রাস্তায় ভ্রাম্যমান হকারের কমতি নেই। এসব হকারেরা ফুটপাত দখল করার কারনে পথচারীরা ফুটপাত দিয়ে চলাচল করতে না পেরে রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হয়। নজরুল নামে এক পথচারী জানান, এসব হকারদের কারনে আমরা ফুটপাত দিয়ে না হেঁটে বাধ্য হয়ে রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। রুবেল নামে আরেক পথচারী জানান, পৌরসভা সকালে ফুটপাত দখলমুক্ত করলে বিকেলে আবার হকারদের দখলে চলে যায়। এমনও দেখা গেছে পৌরসভা ফুটপাত দখল মুক্ত করতে করতে সামনের দিকে যাচ্ছে আর পেছন থেকে আবার আগের মতই ফুটপাত দখলে চলে যাচ্ছে। শারমিন নামে এক কলেজ ছাত্রী জানান, হকারদের কারনে ফুটপাত সংকুচিত হওয়ায় ফুটপাত দিয়ে চলাচল করার সময় পাশে অন্য লোকের গায়ের সাথে ধাক্কা লাগে, এতে করে নিজেকে লজ্জিত মনে হয়।
বেশ কয়েকজন হকারেরা সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা কেউ দৈনিক, আবার কেউ মাসিক ভাড়া দেন যেই দোকান বা মার্কেটের সামনে বসেন সেই দোকান বা মার্কেটের মালিককে। দৈনিক ভাড়া প্রদানকারীরা ভাড়া প্রদান করেন প্রতিদিন সর্বনিু দুইশত টাকা থেকে সর্বোচ্চ পাঁচশত টাকা পর্যন্ত। কেউবা আবার মাসিক ভাড়া প্রদান করেন সর্বনিু দুই হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ সাত হাজার টাকা পর্যন্ত। হকারদের ভাড়া নেয়ার ব্যাপারে দোকান বা মার্কেটের কয়েকজন মালিকের সাথে কথা বললে তারা ভাড়া নেয়ার ব্যাপারটি অস্বীকার করেন। অপর একজন হকার বলেন, মানুষ চলাচলে ফুটপাতে অসুবিধা হওয়ায় রাস্তায় নেমে এসেছি। অনেক বছর ধরেই এভাবে ফুটপাত আর রাস্তায় ব্যবসা করছি। কেউ বাধা দেয় না। মাঝে মধ্যে পুলিশ তুলে দেয়। আবার ঠিক হয়ে যায়। ট্রাংক রোডে বাচ্চাদের কাপড় বিক্রয়কারী এক হকার জানান, আমরা দৈনিক আড়াইশ টাকা থেকে তিন’শ টাকা সালামী দিয়ে এখানে ব্যবসা করছি। আমাদের কে উঠাবে? কাদের টাকা দিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তৃতীয় একটি পক্ষ আমাদের থেকে এ টাকাগুলো নিয়ে যায়।
ফেনী পৌরসভা এসব অবৈধ হকারদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান অব্যহত থাকলেও তাদেরকে স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করতে পারছে না পৌর কর্তৃপক্ষ। গত ৯ জুলাই পৌর মিলনায়তনে শহরে যানজট নিরসন ও ফুটপাত দখলমুক্ত করণের লক্ষ্যে সিএনজি অটোরিক্সা মালিক ও শ্রমিক সমিতি, গ্রীণ টাউন সার্ভিস মালিক সমিতি, রিক্সা মালিক সমিতি সহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজীর সভাপতিত্ব ও সচিব খান মোহাম্মদ ফারাবীর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন মেয়র হাজী আলাউদ্দিন। এছাড়াও পৌর কাউন্সিলর মাহতাব উদ্দিন মুন্না, ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পারভেজুল ইসলাম হাজারীসহ পৌর কাউন্সিলগণ উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল ১০ জুলাই সকালে মেয়র হাজী আলাউদ্দিন পৌর কর্মচারীদের নিয়ে শহরে যানজট নিরসনে অভিযান পরিচালনায় তদারকি করেন এবং সকল রিক্সা চালকদের লাইনে চালানোর নির্দেশ দেন।
এ ব্যাপারে ফেনী পৌরসভার মেয়র হাজী আলাউদ্দিন বলেন, পৌরবাসী ও জনসাধারণের সুবিধার্থে ফুটপাত হকারমুক্ত করার জন্য জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও পৌরসভার সমন্বয়ে হকারদের উচ্ছেদ অভিযান প্রতিনিয়ত চলছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। এ ব্যাপারে সকলের সমন্বিত সহযোগিতা প্রয়োজন।
ফেনী পৌরসভার প্যানেল মেয়র আশ্রাফুল আলম গিটার বলেন, ফুটপাত থেকে অবৈধ হকারদের উচ্ছেদ করা হলেও আবার বিভিন্ন দোকানের সামনে বসে যান। হকার উচ্ছেদ অভিযান চলছে এবং তা আরো জোরদার করা হবে। এ সমস্যা সমাধানে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
ফেনীর সচেতন মহল মনে করেন এসব হকারদের উচ্ছেদ করার পাশাপাশি যেসব দোকান বা মার্কেটের সামনে হকাররা বসে সেইসব দোকান বা মার্কেটের মালিকদেরকেও জরিমানার আওতায় আনা উচিত। সেই সাথে গরীব এবং অসহায় হকারদের জন্য পৌরসভা কর্তৃক নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করে দেয়া উচিৎ। এতে করে হকারেরা ফুটপাত আর দখল করবে না।
নায়িকা দীঘির বিরুদ্ধে কোটি টাকার মামলা করবেন
স্বনামধন্য নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত মুক্তি প্রতীক্ষিত ছবি ‘তুমি আছো তুমি নেই’র পোস্ ...বিস্তারিত