উর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল নিম্নে উতলা ধরণী তল, অরুণ প্রাতের তরুণ দল, চল রে চল রে চল। ক্রিকেট বিশ্বে চলতে চলতে বাংলাদেশ পৌঁছে গেছে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে, প্রতিপক্ষ ভারত। আর ভারতের সঙ্গে খেলা মানেই মাশরাফির সেই অমর উক্তি, ধরে দে বানে। আর ধরে দিতেই টিম বাংলাদেশ এসে গেছে বৃটিশ মুলুকে। হিসেব নিকেষ মেলানো বাকি আছে ২০১৫ বিশ্বকাপের হিসেব, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষ ওভারের হিসেব। তাই টাইগাররা আশাবাদি তারা এবার চুকিয়ে দেবে সব লেনাদেনা। পাকিস্তান বিশ্ব ক্রিকেটের আনপ্রেডিকটেবল দল হলে বাংলাদেশ বিশ্ব ক্রিকেটের সৌন্দর্য। বাংলাদেশের প্রতিটি জয় সৌন্দর্য মন্ডিত। সেই বিশ্ব ক্রিকেটের সৌন্দর্যকে আরো বিকশিত করার লক্ষ্যে ঐতিহাসিক এক ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ।
বার্মিংহামের এজবাস্টনে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩.৩০ মিনিটে। সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি, মাছরাঙা টিভি, গাজী টিভি, হট স্টার ও স্টার স্পোর্টস ১।
ক্রিকেটের আদি দ্বৈরথ অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড পুরনো হয়ে গেছে...মরচে পড়েছে ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনায়....সেখানে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ-ভারতের রেষারেষি...এক সময়ের ছোট দল বাংলাদেশ এখন যে চোখে চোখ রেখে লড়ে যায়..দাম্ভিকতার শক্ত জবাব দেয় চওড়া ব্যাটে.. সেই আঁচে পোড়ে ভারতও...বাংলাদেশ ভারত ক্রিকেট যুদ্ধের উন্মাদনার যত গল্প।
আইসিসির কোনো ইভেন্টে এখন আর চমক নয় বাংলাদেশ। ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করে প্রায় প্রতিটি আসরেই নিজেদের প্রমাণ করেছে দলটি। আর এবার প্রথমবারের মতো আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে উঠে ইতোমধ্যেই ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে মাশরাফির বাংলাদেশ।
উষার দুয়ারে হানি আঘাত, আমরা আনিব রাঙা প্রভাত, এনেছে টাইগাররা রাঙা প্রভাত এনেছে। এবার ওদের লক্ষ্য দেশকে আরো একটা রঙিন প্রভাত এনে দেয়া। তারই প্রস্তুতিতে মহা মগ্ন বাংলার দামাল ছেলেরা।
টাইগারদের সামনে রয়েছে মাত্র একটি ম্যাচ। যা নিজেদের করে নিতে পারলেই তৈরি হবে আরও একটি ইতিহাস। সেটি হল প্রথমবারেরমত চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালের মহারণে সামিল হওয়ার।
এ এমন এটা ম্যাচ যেটা বাংলাদেশের সম্মান এক ধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। এজবাস্টনে জিতলে আরও একধাপ উপরে চলে যাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট। পাকিস্তান ভারত দ্বৈরথ পেছনে ফেলে বাংলাদেশ ভারত যে নতুন ক্রিকেট উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে গত বছর দুয়েক ধরে, সেটা আরো একধাপ জমিয়ে তুলবে নিঃসন্দেহে।
২০০৭ বিশ্বকাপে অনিল কুম্বলে উপেক্ষা জবাব, ২০১২ সালে টেন্ডুলকারের শততম সেঞ্চুরি ম্যাচে বাংলাদেশের জয়, ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল আম্পায়ারগেট কেলেঙ্কারি। দেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জয় এবং ২০১৬ টি-২০ বিশ্বকাপে ভারতের কাছে উত্তেজনাকর ম্যাচে নাটকীয় হার; এসব ঘটনাপ্রবাহ বাংলাদেশ ভারত লড়াইয়ে নতুন রস, উত্তেজনা এনে দিয়েছে। দারুণ জনপ্রিয় করে তুলেছে দু্ই দেশের দ্বৈরথকে। এজবাস্টন সেমিফাইনাল নিয়ে টানটান উত্তেজনায় দুই দেশের কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমী।
পরিসংখ্যানে ওডিআই ফরম্যাটে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ৩৩টি ম্যাচ খেলেছে। যেখানে ২৬টিতেই টিম ইন্ডিয়া জয় পেয়েছে। আর বাংলাদেশ নিজেদের করে নিতে পেরেছে ৫টি ম্যাচ। বাকি দুটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে।
এখানে ভারতের অবশ্য স্বস্তিতে থাকতে পারছে না। কেননা ২০০৭, ২০১২, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে টাইগারদের দেয়া সেই কঠিন সময় দলটি ভুলতে পারেনি।
এদিকে বাংলাদেশের জন্য ম্যাচটি যতটাই ইতিহাস গড়ার হাতছানি দিচ্ছে তার চাইতেও বড় ইতিহাস গড়ার হাতছানি ভারতের সামনে। কেননা এই ম্যাচে বাংলাদেশকে হারাতে পারলে সর্বোচ্চ চতুর্থবারের মতো ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা।
আর শিরোপা জিততে পারলে সেটাও হবে সর্বোচ্চ। কেননা ২০০২ ও ২০১৩ সালের পর টানা দ্বিতীয় ও সর্বোচ্চ ৩ বারের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি’র চ্যাম্পিয়নের খেতাব জিতবে কোহলির ভারত।
ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে দুই দলের অধিনায়কই চাপকে পাত্তা না দেওয়ার কথা বললেন বারবার। আগের দিন বাংলাদেশ কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহেও একই কথা বলেছেন ঘুরেফিরে। চাপ সরানোর জন্য যখন এত কথা আর আয়োজন, তখন আরও ভালো করে বোঝা যায় চাপের তীব্রতা!
বাংলাদেশ-ভারতের লড়াই গত দুবছর যতটা উত্তেজনা ছড়িয়েছে, যতটা রোমাঞ্চ, বিতর্কের শাখা-প্রশাখায় যত টান পড়েছে, তাতে এই দুই দেশের প্রতিটি লড়াই এখন ‘হাইভোল্টেজ।’ আর এটি তো চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল!
লাইন আপ ঠিক হওয়ার পর থেকেই বাতাসে উড়ছে উত্তেজনার রেণু, ছড়াচ্ছে বারুদের গন্ধ, বাজছে দামামা।
অধিনায়ক মাশরাফি বলেন, “এই ম্যাচের হাইপ অনেক থাকবে এটা সত্যি। তবে আরেকটা ম্যাচ হিসেবেই নিতে চেষ্টা করব আমরা। আমাদের প্রথম কাজ হবে রিল্যাক্সড থেকে ম্যাচটি খেলা।”
“ছেলেরা বেশ রোমাঞ্চিত, এরকম একটা টুর্নামেন্টের সেমি-ফাইনাল খেলছি। এখানে আসার আগেই টুর্নামেন্টটিকে আমরা প্রতিটি ম্যাচ হিসেবে নিতে চেয়েছিলাম। সেভাবেই খেলেছি। এখন সেমি-ফাইনাল খেলছি। সবাই যদি সেমি-ফাইনাল না ভেবে আর দশটা ম্যাচের মত খেলতে পারে, তাহলে ভালো।”
“ক্রিকেট জাতি হিসেবে উন্নতি করতে হলে এই ধরনের ম্যাচ প্রচুর আসবে। এমন একটা টুর্নামেন্টে এসে কাউকে বেছে নেওয়ার সুযোগ নেই। এরকম চাপের ম্যাচ খেলতে হবে। এটা উপভোগ করা ছাড়া বাড়তি চাপ নেওয়া মাথায় রাখা যাবে না। সবাই যদি নির্ভার হয়ে, দ্বিপাক্ষিক সিরিজের মত খেলতে পারি, তাহলে আমাদের কাজ সহজ হবে।”
অন্যদিক ভারতের অধিনায়কের ভাষ্য, ‘বাংলাদেশ এই মুহূর্তে ক্রিকেট বিশ্বের শীর্ষ আট দলের একটি। তারা ভালো ক্রিকেট খেলছে এবং সেমিফাইনালে খেলার যে সামর্থ্য থাকা দরকার, তা তাদের রয়েছে। অবশ্যই তাদেরকে কৃতিত্ব দেওয়া উচিত। বাংলাদেশ যে কাজটা করছে সেটা সত্যিই অসাধারণ’
কোহলি বলেন, ‘বাংলাদেশের একাধিক স্কিল ক্রিকেটার রয়েছে, যারা সব সময় বাংলাদেশের হয়ে খেলতে মুখিয়ে থাকে। তাদের শারীরিক ভাষা দেখলে বোঝা যায়, তারা সব ম্যাচ জিততে চায়। শেষ ম্যাচে (নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে) লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে তারা যেভাবে নিজেদেরকে মাঠে প্রয়োগ এবং ধৈর্য্য ধরে খেলেছে, সেটা এক কথায় মনোমুগ্ধকর। বাংলাদেশ যে দিন দিন উন্নতি করছে, এটাতেই প্রমাণ হয়। কঠিন পরিস্থিতিতে কীভাবে ম্যাচ জিততে হয়, সেটা শিখেছে। তারা অবশ্যই কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী। তাদেরকে হালকা করে নেওয়ার কিছু নেই।’
নব নবীনের গাহিয়া গান আমরা দানিব নতুন প্রাণ, বাহুতে নবীন বল। আজকের ম্যাচে সেই নবীন বল দিয়ে ভারত কুপোকাত করা সম্ভব যদি ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে তিন ইভেন্টেই বাংলাদেশ একসঙ্গে জ্বলে উঠে সেই প্রত্যাশায়।
বাংলাদেশ সম্ভাব্য একাদশ: তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক হোসেন, তাসকিন আহমেদ, মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান
ভারত সম্ভাব্য একাদশ: রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান, বিরাট কোহলি (অধিনায়ক), যুবরাজ সিং, মাহেন্দ্র সিং ধোনি (উইকেটরক্ষক), কেদার যাদব, হার্দিক পান্ডে, রবিন্দ্র জাদেজা, ভুবনেশ্বর কুমার, জসপ্রিত বুমরাহ।
নায়িকা দীঘির বিরুদ্ধে কোটি টাকার মামলা করবেন
স্বনামধন্য নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত মুক্তি প্রতীক্ষিত ছবি ‘তুমি আছো তুমি নেই’র পোস্ ...বিস্তারিত