সৌরভ পাটোয়ারী, ফেনী :পাশের সাইক্লোন সেন্টারে পাঠদানের অযুহাতে দীর্ঘ দুই যুগ ধরে অযত্নে আর অবহেলায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে ফেনী সদর উপজেলার উত্তর কাশিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি।
কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এখানে লাগেনি উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া, নেওয়া হয়নি নতুন ভবনের তৈরীর কোনো পদক্ষেপ।
নিজস্ব ভবন থাকার পরও
পার্শ্ববর্তী সাইক্লোন সেন্টারে চলছে
পাঠদানসহ বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম।
এদিকে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার কারণে বিদ্যালয়ের টিন-কাঠসহ সকল সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে গেছে। ভেঙ্গে পড়েছে টিনশেড ভবনের নানা অংশ। অন্যদিকে ভালো পরিবেশের অভাবে কমে যাচ্ছে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, ১৯৭২ সালে বাঁশের বেড়ায় নির্মিত বিদ্যালয়টি ভবনে প্রথম পাঠদান শুরু হয়। এরপর ১৯৯৩ সালের দিকে বিদ্যালয়টি বেড়ার ঘর থেকে সংস্কার করে আধা-পাকা টিনশেড ঘর করে। পাঁচ বছর না গড়াতেই ১৯৯৭ সালে দিকে বিদ্যালয়ের ওপরের টিনগুলো ফুটো হয়ে যায়। এরপর জোড়াতালি দিয়ে চলে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি আর রোদের খরতাপ থেকে বাঁচতে তাৎক্ষণিক বিদ্যালয়ের সকল কিছু স্থানান্তর করা হয় পাশের সাইক্লোন সেন্টারে।
সেই থেকে অদ্যাবধি পাঠদান চলছে সাইক্লোন সেন্টারে। এর পর থেকে বিদ্যালয়ের পুরাতন জরাজীর্ণ টিন ও কাঠ ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে ঝরে ঝরে পড়ছে কক্ষগুলোতে। বিএনপি সরকারের শাসনামলে বিদ্যালয়টি যেমন ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের সাত বছরের শাসনামলেও তেমন অবহেলিত রয়ে গেছে।
উত্তর কাশিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভেতরের অবস্থা (ছবি : সৌরভ)
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১৬০ জন। প্রতিনিয়ত কমছে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা। শ্রেণি কার্যক্রম চলছে পাশের সাইক্লোন সেন্টারে। তবে সাইক্লোন সেন্টারটি দৃশ্যমান ও মানসম্মত বিদ্যালয় না হওয়ায় ক্লাস নিয়ে শিক্ষকরা যেমন তৃপ্তি পাননা তেমনি মানসিকভাবে উৎসাহ পায় না শিক্ষার্থীরাও।ফলে ‘সবার জন্য শিক্ষা কার্যক্রম’ সরকারে এই প্রশংসনীয় উদ্যোগ এখানে থমকে গেছে।
বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষিকা ফেরদৌস আরা জানান, সকল সরকারের আমলেই এ ভাঙ্গা বিদ্যালয়টি উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জন প্রতিনিধিরা। কিন্তু কেউ তা পালন করেননি। ফলে ১৯৯৮ সাল থেকে অধ্যবদি বিদ্যালয়টি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তাই বাধ্য হয়েই সাইক্লোন সেন্টারে ক্লাস করতে হয়।
বিদ্যালয়ের সভাপতি খোরশেদ আলম মজুমদার জানান, বিদ্যালয় ভবন সংস্কারের জন্য ফেনী-২ এর সংসদসদস্য, ফেনী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান, এলজিইডি ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর আবেদন করা হয়েছে অনেক বার। তবে কাজ হয়নি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মানিক জানান, বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। সেটা ফাইলে চাপা পড়ে আছে দীর্ঘদিন থেকে। সাইক্লোন সেন্টারে ক্লাসতো চলছেই, এই অযুহাতে বিদ্যালয়টি আজো অবহেলিত হয়েই পড়ে।