স্টাফ রিপোর্টার ঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ফেনী-২নং আসনে ইতোমধ্যে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে নানা হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। ফেনী ২ ফেনী সদর এই আসনটি রাজনীতিতে জেলার একটি মর্যাদা ও গুরুত্বপূর্ণ আসন হিসাবে ভোটারদের কাছে বিবেচিত। এই আসনে আওয়ামী লীগের মরহুম খাজা আহাম্মদ ছাড়াও জয়নাল হাজারী তিনবার, (১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬ সাল), অধ্যাপক ভিপি জয়নাল তিন বার, (১৯৮৮, ২০০১, ২০০৮ সাল), সর্বশেষ ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাবেক জেলা সাধারণ স¤পাদক জয়নাল আবেদীন হাজারী ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচনে তৎকালীন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবদুস সাক্তারকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন । ১৯৯১ সালে বিএনপি জেলা সাধারণ স¤পাদক শহীদ উদ্দিন ফেরদৌসকে এবং ১৯৯৬ সালে বিএনপি’র ফেরদৌস আহাম্মদ কোরাইশীকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। অপরদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপি সাবেক সাধারণ স¤পাদক অধ্যাপক জয়নাল আবেদিন ১৯৮৮ সালে জাসদ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ স¤পাদক জয়নাল হাজারীকে এবং ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ইকবাল সোবহান চৌধুরীকে হারিয়ে বিএনপি থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ফেনী পৌরসভা ও সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে ফেনী-২ সদর আসন গঠিত। ফেনী জেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে নিজাম উদ্দিন হাজারীর আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারন নিজাম হাজারীর নেতৃত্বেই ফেনী জেলা আওয়ামীলীগ ঐক্যবদ্ধ। অপরদিকে, বিএনপির সাবেক এমপি ভিপি জয়নালের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া চ্যালেঞ্জে পড়তে পারে অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক এমপি বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-প্রশিক্ষণ স¤পাদক রেহানা আক্তার রানুর কারণে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এই আসনটি বিএনপি অধ্যুষিত বলে পরিচিত ছিল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় আসনটি চলে যায় আওয়ামী লীগের দখলে। দুই দলেই রয়েছেন একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী। গত কয়েক বছরে ৬ উপজেলা, ৫ পৌরসভা, ৪৪টি ইউনিয়ন পরিষদ এবং সর্বশেষ জেলা পরিষদ নির্বাচনে সব ক’টি পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হন। তাই এবার প্রার্থী বাছাইয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থান বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এতে করে কোনো ব্যতিক্রম না ঘটলে ফেনী সদর আসনে এবারো নিজাম উদ্দিন হাজারী দলের মনোনয়ন পাচ্ছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য উপদেষ্টা সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও সাবেক এমপি জয়নাল হাজারীসহ আরো দু’একজন দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেলেও তারা প্রকাশ্যে কোনো ঘোষণা দেননি। ইকবাল সোবহান চৌধুরী ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে হেরে যান বিএনপি দলীয় প্রার্থী অধ্যাপক জয়নাল আবদীন ভিপির কাছে। এ ছাড়া বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মামলা-হামলায় কোণঠাসা বিএনপি। ফলে উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন নির্বাচনে অনেক জায়গায় প্রার্থী দিতে পারেনি স্থানীয় বিএনপি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল অংশ নেবে এমনটা ধরে নিয়ে এই আসনে বিএনপি থেকে মূলত প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেকেই। তাদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি অধ্যাপক জয়নাল আবদীন ভিপি, কেন্দ্রীয় সহ-প্রশিক্ষণ স¤পাদক রেহানা আক্তার রানু, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব সৈয়দ হাসান আহম্মদ, জেলা বিএনপির সাধারণ স¤পাদক জিয়াউদ্দিন মিস্টার, জেলা যুবদলের সভাপতি গাজী হাবিব উল্যাহ মানিক। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব সৈয়দ হাসান আহম্মদ বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। সম্প্রতি ফেনীর লেমুয়ায় তার গ্রামের বাড়িতে এসে এলাকার সুশীল সমাজের সাথে মতবিনিময় করেন। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব খোন্দকার নজরুল ইসলাম ও জামায়াতের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও সাবেক জেলা আমির অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঞা দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলেও জানা গেছে।