হকার্স রিপোর্ট ইয়াবা পাচারের রুটে পরিণত হয়ে গেছে ফেনী। এমন আশংকা সর্বত্র। গত ২ বছর ৮ মাস ২৯ দিনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৩৯টি অভিযানে ৮ লক্ষ ৭৩ হাজার ৬৮১ পিস ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২২ কোটি টাকা। সাপ্তাহিক হকার্স এর ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর থেকে ৯ জুলাই ২০১৭ প্রকাশিত সংখ্যা সমূহ বিশে¬ষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, ডিবি এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ২০১৭ সালের গত ৯ জুলাই ৫০ পিস ইয়াবাসহ ফেনী পৌরসভার বারাহিপুর এলাকা থেকে একজনরক গ্রেফতার করে মাদক রাখার দায়ে এক বছরের কারাদন্ড দেয় ভ্রাম্যমান আদালত। ৪ জুলাই ৮পিস ইয়াবা রাখার দায়ে এক মাদক ব্যবসায়ীকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে কারাদন্ড দেয়া হয়। ৩ জুলাই সদর উপজেলার মোটবী ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রাম থেকে ১’শ পিস ইয়াবাসহ একজনকে আটক করে পুলিশ। ১৯ জুন ছাগলনাইয়ার পাঠাননগর থেকে ১৫ পিস ইয়াবা সহ একজনকে আটক করে পুলিশ। ১৩ মে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে র্যাব ৩৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ ২ জনকে আটক করে। ২ মে লালপোল নামক স্থানে ১ হাজার পিস ইয়াবাসহ একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত ২০ এপ্রিল ৫৫ পিস ইয়াবাসহ শহরের রামপুর এলাকা থেকে একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২৮ মার্চ রাতে র্যাব উদ্ধার করে ৪০ হাজার পিস ইয়াবা, ২১ মার্চ বারাহিপুর থেকে ১৫৫ পিস, ৮ মার্চ বালিগাঁও থেকে ৩০ পিস, ৪ মার্চ শিবপুর থেকে ২’শ পিস, ৩ ফেব্র“য়ারি রেলস্টেশন এলাকা থেকে ৯ হাজার ৭২০ পিস, ৮ জানুয়ারি লালপোল থেকে ১ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
২০১৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর মহাসড়ক থেকে ৫’শ পিস, ১৮ ডিসেম্বর ছাগলনাইয়া থেকে ৪৭০ পিস, ২১ নভেম্বর পাঁচগাছিয়া এলাকা থেকে ১০ পিস, ২৪ অক্টোবর শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ৬০ পিস, ১৬ অক্টোবর শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ৫ হাজার পিস, ৮ আগস্ট ফেনী জেল গেইট থেকে ৩৫ পিস, ৩০ জুন শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ১৬০ পিস, ২১ মার্চ বারাহিপুর এলাকা থেকে ১৫৫ পিস, ৮ জানুয়ারি লালপোল এলাকা থেকে ১ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
২০১৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি প্রাইভেট কার থেকে ২ হাজার পিস, ১১ ডিসেম্বর রামপুর এলাকায় কমলাবাহী একটি কাভার্ডভ্যান থেকে ৬৫ হাজার পিস, ১৫ অক্টোবর পেট্রোবাংল এলাকা থেকে ২’শ পিস, ১৫ সেপ্টেম্বর পাঠানবাড়ি এলাকা থেকে ৩ হাজার পিস, ৪ সেপ্টেম্বর চাড়িপুর থেকে ২০ পিস, ৬ আগস্ট আদালত এলাকা থেকে ৮৫ পিস, ৫ আগস্ট ফেনী শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ৬ হাজার পিস, ১২ জুলাই সোনাগাজীতে ২’শ পিস, ২০ জুন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লালপোল এলাকায় পুলিশের বিশেষ শাখার এসআই মাহফুজুর রহমানকে একটি প্রাইভেট কারসহ ৭ লাখ পিস, ৩ জুন একাডেমী এলাকায় ৩৮ পিস, ২৬ মে তাকিয়া রোড এলাকায় ১’শ পিস, ২০ মে পিটিআই গলিতে ৫০ পিস, ১৩ এপ্রিল পাঠানবাড়ী রোডে ৩ হাজার পিস, ২৩ মার্চ শহরের একটি মনোহরি দোকানে ৫০ পিস, ১৭ মার্চ ফেনী শহরের একটি হোটেলে ৬০ পিস ও ১০ জানুয়ারি ছাগলনাইয়া থেকে ২১ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর হাজারী রোড এলাকায় ২০ পিস, ২৩ অক্টোবর ফেনী রামপুর এলাকা থেকে ৩৯ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।
এ পরিসংখ্যান গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের একটি অংশ মাত্র। এটি উদ্ধার হওয়ার চিত্র হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চোখকে ফাঁকি দিয়ে কি পরিমাণ ইয়াবা পাচার ও বিক্রি হচ্ছে তা নিয়ে মারাত্মক শংকা দেখা দিয়েছে। সচেতন মহলের ধারণা বাংলাদেশ লাইফ লাইন ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবা পাচার সহজ। এ রুট দিয়ে বাংলাদেশের যে কোন প্রান্তে ইয়াবা পৌঁছানো যায়। আকারে ছোট হওয়ায় ভয়াবহ এ মাদক পাচারে চোরাকারবারীরা উৎসাহী হয়। গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে পাচারের এ রুট নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে মনে করেন সচেতন মহল। চট্টগ্রাম শহর নিকটবর্তী হওয়ায় ফেনী জেলার শহর থেকে গ্রাম সর্বত্র থাবা বিস্তার করছে ইয়াবা। শহরের রেলস্টেশন, বিরিঞ্চি, একাডেমী, সিও অফিস, রামপুর, উকিল পাড়া, বারাহিপুর, আরামবাগ এবং মহিপালের অলিগলিতে দিনরাত চলে ইয়াবা বেচাকেনা। এসব এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ মাঝে মধ্যে দু’একটি অভিযান ছাড়া আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ ব্যাপারে তেমন কোন ভূমিকা পালন করে না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কিছু অসাধু ব্যক্তিও এ ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতা করে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তাদের পরামর্শ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যদি গোয়েন্দা নজরদারি ও তৎপরতা বৃদ্ধি করে তাহলে বিক্রেতাদের দৌরাত্ম কমে যাবে। এতে করে নিয়ন্ত্রণে আসবে ভয়াল এ নেশার। এখন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে ইয়াবা। আইনের কঠোর প্রয়োগ ও সামাজিক সচেতনতাই রুখতে পারে ইয়াবার এই মরণ থাবা, এমন মত ফেনীবাসীর।