সংবাদদাতা,২৫শে জানুয়ারী
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ফেনী জেলার প্রথম সাবেক আমীর, ফেনী জেলা আন্দোলনের অন্যতম রূপকার, ফেনীর অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা এজিএম বদরুদ্দোজা গতকাল শুক্রবার শেষরাত ভোর ৫টায় ফেনীতে তাঁর মেয়ের বাসায় ৭২ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহিরাজেউন। মৃত্যু কালে তিনি এক পুত্র(বর্তমান সহকারী এটর্নী জেনারেল),৫কন্যা ও অগনিত গুনগ্ৰাহী রেখে যান। তাঁর মরহুম পিতা মাওলানা মকবুল আহমদ আনসারীও একজন বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন ও ইসলামী আন্দোলনের নিবেদিত প্রাণ মানুষ ছিলেন। মাওলানা বদরুদ্দোজা ফেনী জেলা আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ছিলেন ও ১৯৮৪সালে জেলা হওয়ার পর থেকে ১৯৯১ সাল অবধি জেলা আমীর ছিলেন।১৯৯১ সালে স্বেচ্ছায় আমীরে জামায়াত থেকে ছুটি নিয়ে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরব যান। অত্যন্ত সহজ সরল জীবন যাপনে অভ্যস্ত মাওলানা বদরুদ্দোজা ফেনীর আল জামেয়াতুল ফালাহীয়া মাদ্রাসা, ফেনী শাহীন একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজ, সোনাগাজী আল হেলাল একাডেমী,ছিলোনীয়া মাদ্রাসা,ফুলগাজী একাডেমী, দাগনভূঞা একাডেমী,ফেনী হলি ক্রিসেন্ট স্কুল সহ অসংখ্য স্কুল,কলেজ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন যেসব প্রতিষ্ঠান তাঁর জীবদ্দশায়ই দেশ জোড়া সুনাম সুখ্যাতি অর্জন করেছে।প্রখর ব্যক্তিত্ব ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন এই মানুষটিকে বলা হতো প্রতিষ্ঠান গড়ার কারিগর।
গতকাল বাদজোহর তাঁরই প্রতিষ্ঠিত আল জামেয়াতুল ফালাহীয়া কামিল মাদ্রাসা মাঠে প্রথম নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।বাদ মাগরিব দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের ছিলোনীয়া হাইস্কুল মাঠে দ্বিতীয় জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।পরে একই ইউনিয়নের সোনাপুর গ্ৰামে মরহুমের নিজস্ব পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।প্রথম জানযায় ইমামতি করেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা এটিএম মাছুম।জানাযা পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও কুমিল্লা জেলা আমীর কাজী দ্বীন মোহাম্মদ,জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও সাবেক জেলা আমীর অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, অপর সাবেক জেলা আমীর একেএম শামছুদ্দিন, বর্তমান জেলা আমীর মুফতী আবদুল হান্নান,জেলা নায়েবে আমীর অধ্যাপক আবু ইউসুফ, মরহুমের একমাত্র পুত্র সহকারী এটর্নী জেনারেল আব্দুল্লাহ আল ফাহিম, মরহুমের জামাতা মাওলানা মোঃ ইসমাইল।
মাওলানা এটিএম মাছুম বলেন, ফেনী জেলা জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আমীর মাওলানা বদরুদ্দোজার জীবন থেকে আমাদের প্রত্যেকের শিক্ষা নেয়ার অনেক কিছু আছে।তিনি একজন ব্যক্তিমাত্র ছিলেননা,তিনি ছিলেন একজন ক্ষণজন্মা মানুষ,একটি ইতিহাস।এক জীবনে তিনি সমাজের জন্য,দেশের জন্য যা করেছেন তা ছিল অকল্পনীয়। মুসলিম উম্মাহর জন্য তিনি আমৃত্যু সংগ্ৰাম করে গেছেন।তিনি হাজার হাজার আদর্শিক সন্তান রেখে গেছেন যাদের দায়িত্ব তাঁর রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করা। তাঁর আদর্শ বুকে ধারন করা এবং সে আদর্শ বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকা।
জানাযায় বিপুল পরিমাণ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সহ এলাকাবাসী অংশ গ্ৰহন করেন।বিপত্নিক এই মহান মানুষটি জীবনের শেষ দিন গুলো অনেকটা একা কাটে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ফেনী জেলার সাবেক আমীর ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঁইয়া,অপর সাবেক আমীর একেএম শামছুদ্দিন, বর্তমান আমীর ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য মুফতী মাওলানা আবদুল হান্নান ও জেলা সেক্রেটারী মাওলানা আবদুর রহিম মরহুম মাওলানা এজিএম বদরুদ্দোজার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তাঁরা মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তাঁরা উল্লেখ করেন যে, মরহুম মাওলানা বদরুদ্দোজা সারা জীবন দ্বীনের একজন প্রকৃত দ্বায়ীর ভূমিকা পালন করেছেন।তিনি তাঁর প্রজ্ঞা, দক্ষতা, আন্তরিকতা দিয়ে ফেনী জেলা জামায়াতকে সমৃদ্ধ করে গেছেন।দ্বীনের এই খাদেমের জীবনের যাবতীয় খেদমত কবুল করে সাদকায়ে জারীয়া হিসেবে কেয়ামত পর্যন্ত কবরে আল্লাহ যেন পৌঁছে দেন এবং জীবনের ছোটখাট ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমা করে তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউসের মেহমান হিসেবে কবুল করুন এই দোয়া করেন। তাঁরা তাঁর পরিজনকে সবরে জামিল করার তৌফিক কামনা করেন।