এস এম ইউসুফ ':
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন,
জুলাই-আগস্টের সকল হত্যাকান্ডের মাস্টার মাইন্ড ছিলেন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। এর আগে আমাদের প্রিয় ৫জন নেতাকে অন্যায়ভাবে ফাঁসি দিয়েছিল ।
এতে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠলেও,খুনি হাসিনার হৃদয় একটুও কাঁপেনি।বিগত ১৭ বছর ধরে দেশব্যাপী হামলা-মামলা,গুম-খুন,ক্রসফায়ারসহ স্বৈরাচারী হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী ক্যাডার বাহীনির নির্যাতনে মানুষের কষ্টের শেষ ছিলোনা।এখনও যারা ওই ফ্যাসিবাদের
পথ অনুসরণ করতে চাইবে।তাদেরকেও পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ও দলের পরিনতি স্মরণ রাখতে হবে।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে ফেনী জেলা জামায়াতে ইসলামীর ১ হাজার ৭০০টি ইউনিটের সভাপতি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় জামায়াত নেতা অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন,শেখ হাসিনা বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকার জন্য, দেশ থেকে ইসলামের নাম মুছে দেওয়ার জন্য আমাদের সকল আন্দোলন সংগ্রামকে তছনছ করে দিয়েছিল।সারাদেশে সকল অফিস বন্ধ করে দিয়েছিল।আমাদের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীকে গুম-খুন ও কারাগারে আটক করেছিল।
সবশেষে আমাদের দলটিও নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল।কিন্তু ৪/৫ দিনের মাঝে মহান রব গত ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জামায়াতে ইসলামীসহ দেশবাসীকে কতবড় নেয়ামত দান করেছেন।সেই স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে গণভবন থেকে বের করে তার সরকারের লুটপাটকারী এমপি-মন্ত্রী ও দলীয় নেতাদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছিলেন।এখন তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।এরদ্বারা এটাই প্রমান করে ফ্যাসিদের পথে গিয়ে কেউ টিকে থাকতে পারে না।
এ নেয়ামতের শুকরিয়া হিসেবে মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের উপর যে দায়িত্ব দিয়েছেন,সে দায়িত্ব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালন করতে হবে। ঘরে ঘরে গিয়ে প্রতিটি মানুষের কাছে কোরআনের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে।না হয়, আমাদের সকলকে আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশকে ইসলামের আলোকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিনত করতে চায়।এর মাধ্যমে আমরা দেশের প্রতিটি মানুষের নিকট কোরআনের সুশাসন পৌঁছে দিতে চাই।এ কল্যাণ রাষ্ট্র কায়েমে আমরা কোনো বাঁধা মানাবোনা।
বাংলাদেশে বিরুদ্ধে দুটি ষড়যন্ত্র হয়েছিল।একটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে।আর অপরটি জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে।শেখ হাসিনা তার পিতার মিমাংসা করা বিষয়গুলোকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেশে বিভেদ সৃষ্টি ও ইসলামের নাম মুছে দেওয়ার চেষ্টায় মেতেছিল।
আওয়ামী লীগ জামায়াতকে নিয়ে যে ভাষায় কথা বলেছিল,এখনও কেউ কেউ হাসিনার শুরু কথা বলার চেষ্টা করছে।যারা জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে যড়যন্ত্র করে ফায়দা লুটতে চাইছে-তাদের উদ্দেশ্যে বলবো,ধর্ম ব্যবসায়ীরা আমরা না, বরং আমরা ধর্ম পালন করি।শুধু নিজেরা নয় সারা বছর নামাজ, রোজাসহ ধর্মের ভিত্তিতে দেশের সকল মানুষকে সঙ্গে নিয়ে জীবন গড়তে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
ফেনীর ঐতিহ্যবাহী আল জামিয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত উক্ত সভাপতি সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এ.টি.এম মাসুম,কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা ও অঞ্চল টীম সদস্য অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূইয়া ও ফেনী জেলার সাবেক আমীর এ.কে.এম শামসুদ্দিন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এটিএম মাসুম বলেন,স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ এদেশে জীবন্ত মানুষকে পিটিয়ে হত্যার পর লাশের উপর নিত্য করেছিল।এর মধ্য দিয়ে তারা আইয়ামে জাহেলিয়াতকেও হার মানিয়েছিলেন।
১৯৪৬ সালে মাত্র ৭৫ জন মিলে জামায়াতে ইসলামীকে দল হিসেবে গঠন করেছিলেন।এখন কোটি কোটি মানুষ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গী হয়ে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন বাস্তবায়নে দিন-রাত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।আগামীদিনগুলোতেও জামায়াতের প্রতিটি ইউনিটের সকল সদস্যকে কোরআন ও নবীজির জীবনী থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশের প্রত্যেক মানুষের দোরগোড়ায় এ দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে।
ফেনী জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মুফতি আবদুল হান্নানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী মাওলানা আবদুর রহিমের সঞ্চালনায় উক্ত সভাপতি সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারী ডা.ফখরুদ্দিন মানিক,কেন্দ্রীয় মজলিশের শুরা সদস্য এড.এস এম কামাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও ফেনী জেলা নায়েবে আমীর অধ্যাপক আবু ইউসুফ,মাওলানা মাহমুদুল হক।
এর আগে জেলার ৬টি উপজেলা, ৫টি পৌরসভা ও ৪৫টি ইউনিয়নের সব কয়েকটি ইউনিটের ৫ হাজার ৪শত সভাপতি-সেক্রেটারীর উপস্থিতিতে উক্ত সভাপতি সম্মেলনে পবিত্র আল কোরআন থেকে দারস পেশ করেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা ও অঞ্চল টীম সদস্য মাওলানা আলা উদ্দিন।