ফেনী শহরের পুরাতন রেজিস্ট্রি অফিসের মনির উদ্দিন সড়কের তাসপিয়া ভবনের সেপটিক ট্যাংকের ভেতর হতে মোঃ ইউনুছ বাবু (২২) নামে আরেক যুবকের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বাবু একজন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার। তিনি শহরের শাহীন একাডেমী সড়কের একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। তার গ্রামের বাড়ি সোনাগাজীর তাকিয়া বাজারের পাইকপাড়ার সওদাগর বাড়ি।
আজ শনিবার (১০ অক্টোবর) পৌনে এগারটার দিকে বাবুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ আতোয়ার রহমান, ফেনী মডেল থানার (ওসি) মোঃ আলমগীর হোসেন, ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সুদ্বীপ রায়সহ পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে রয়েছেন।
এর আগে গতকাল শুক্রবার ওই ভবনের সেফটিক ট্যাংক হতে গুরুতর আহতাবস্থায় মোঃ শাহরিয়ার নামে অপর এক যুবককে উদ্ধার করা হয়। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ভবনের কেয়ারটেকার মোজাম্মেল হক শাহিন তাদের দুজনকে কুপিয়ে সেফটিক ট্যাংকে নিক্ষেপ করেছে বলে পুলিশ ধারনা করছে। তবে কি কারণে এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে তা এখনো নিশ্চিত নয় পুলিশ। এ ঘটনায় শুক্রবার শাহীনকে আটক করা হয়। একটি রক্তমাখা চাপাতিও জব্দ করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শাহরিয়ার ও বাবু দুজন বন্ধু। বৃহস্পতিবার রাতে দুজনে একসাথে ঘর থেকে বের হয়েছিলেন। কিন্তু গতকাল শাহরিয়ারকে আহতাবস্থায় সেপটিক ট্যাংক হতে উদ্ধার করার পর বাবু না ফেরায় তার স্বজনরা চিন্তিত হয়ে পড়েন। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে বাবুর মা রেজিয়া বেগম শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে ফেনী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। দুইদিন ধরে বাবুর কোন খোঁজ না পাওয়ায় রেজিয়া বেগম ধারনা করেন, বাবুকেও সেফটিক ট্যাংকে ভেতর ফেলা হয়েছে। আজ শনিবার তিনি তার ধারণার কথা পুলিশকে জানান এবং ওই ভবনের সেফটিক ট্যাংকের ভেতর তল্লাশী চালাতে অনুরোধ জানান। পরে রাতের দিকে পুলিশ সদস্যরা এসে সেফটিক ট্যাংকে তল্লাশী চালালে বাবুর লাশের সন্ধান মেলে। লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বাবু ছোট ভাই মোঃ ইফরান বাপ্পী জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে শাহরিয়ার ও রাকিব নামে ভাইয়ার দুই বন্ধু তাকে ফোন করে বাসা থেকে ডেকে নেন। এরপর থেকে ভাইয়ার কোন খোঁজখবর পাইনি আমরা। এ নিয়ে আম্মা খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন। শুক্রবার আমরা খবর পাই ওই ভবনের সেফটিক ট্যাংক গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
ওই ভবনের এক বাসিন্দা জানান, শাহরিয়ার ও বাবু প্রায়ই কেয়ারটেকার শাহীনের কাছে আসতেন। বৃহস্পতিবার রাতেও তিনি আসেন। তার সাথে একটি মোটর সাইকেল ছিলো। কিন্তু শাহীনের সাথে তাদের কি সম্পর্ক ছিল তা আমরা জানিনা।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) দিবাগত রাত তিনটের দিকে নামাজ পড়তে উঠেছিলেন ভবনের বাসিন্দা এক মহিলা। নিচতলায় অস্বাভাবিক আওয়াজ শুনে দরজা খুলে বাইরে গিয়ে তিনি দেখতে পান ভবনের কেয়ারটেকার মেঝেতে পড়ে থাকা রক্ত পরিষ্কার করছে। বিষয়টি তিনি পরিবারের সদস্যদের জানালে তারা নিচে নেমে শুনতে পান ভবনের সেফটি ট্যাংকের ভেতর হতে গোঙানির আওয়াজ বের হচ্ছে। ট্যাংকের মুখ খুললে দেখা যায়, রক্তাক্ত অবস্থায় এক যুবক পড়ে আছে।