পেয়ার আহাম্মদ চৌধুরী (ফেনী) পরশুরামঃ
পরশুরামে পাকা ধানে ব্লাষ্ট রোগের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক। নির্দিষ্ট পরামর্শ না পেয়ে দোকান থেকে টুপার,বাষ্টিং ঔষধ ছিটিয়ে কোন প্রতিকার না পাওয়ায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হওয়া নিয়ে শংকা রয়েছে ।
কৃষকরা জানান, ক্ষেতের আধা পাকা ধান দ্রুত চিঠা হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন মাঠের পর মাঠ আক্রান্ত হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, পরশুরামে ২ হাজার ৪শ' ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে ধান পাকার মুখে ব্লাষ্ট রোগ দেখা দেয়ায় আধাপাকা ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। কৃষকদের অভিযোগ, এখন পর্যন্ত মাঠে দেখা মিলছেনা উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের।
উপজেলায় ৪ জন উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন। মির্জানগর ইউনিয়নে মো: সামছুল হুদা বক্সমাহমুদ ইউনিয়নে কাজি আবু হেনা মেহেদি, পৌর এলাকায় মো: আমির উদ্দিন ও চিথলিয়া ইউনিয়নে পিন্টু কুমার দাস কর্মরত রয়েছেন। দায়িত্বে থাকলেও মাঠে তাদের পাচ্ছেন না বলে কৃষকদের অভিযোগ।
উপ সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা এটিএম খোরশেদ আলম জানান, ব্রি-২৮.২৯.৫৮ জাতের ধানে ব্লাষ্ট রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে বেশ কয়েকজন কৃষক ব্লাষ্টে আক্রান্ত ধান গাছ নিয়ে অফিসে এসেছিল তাদেরকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, উপজেলার বক্সমাহমুদ,চিথলিয়া, মির্জানগর এবং পৌর এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামের সাড়ে ১০ হেক্টর জমিতে ব্লাষ্ট রোগ দেখা দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মূলত ব্লাষ্ট রোগ দেখা দিয়েছে। দিনে গরম ও রাতে ঠান্ডা পড়ায় বোরো ধানে এই রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা।
মির্জানগর ইউনিয়নের সত্যনগর গ্রামের কৃষক মো: বেলাল হোসেন জানান, তিনি এবার ৪০ শতক জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। আর কিছুদিন পরে ধান কাটা শুরু হবার কথা। কিন্তু ব্লাষ্ট রোগে তিনি সর্বশান্ত হয়েছেন। সুবার বাজারের কিটণাশক দোকান থেকে দোকানদারের পরামর্শে টুপার ছিটিয়ে কোন সুফল পাননি।
নিজকালিকাপুর গ্রামের কৃষক আবুল খায়ের জানান, এবার তার বোরো ফলন ভাল হয়েছিল। কিন্তু ব্লাষ্ট রোগে বেশীর ভাগ ফসলে অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
ধান পাকার সাথে সাথে জেলার বেশ কয়েকটি স্থানে বোরো ধানে ব্লাষ্ট রোগ দেখা দিয়েছে। উপজেলার বক্সমাহমুদ,চিথলিয়া, মির্জানগর এবং পৌর এলাকাসহ বেশকয়েকটি গ্রামের মাঠে বোরা ধানে এই রোগ দেখা দিয়েছে। ফলে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের মুখে শেষ মূহুর্তে ব্লাস্ট নামক ছত্রাকের আক্রমণে কৃষকরে মাথায় হাত তাদের মুখের হাসি ম্লান করে দিয়েছে ব্লাষ্ট।
উপজেলার কৃষকরা জানান, চলতি মৌসুমে প্রতি কানি জমিতে বোরো ধান চাষে সব মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। ক্ষেতের ধানও প্রায় আধা পাকা হয়ে গেছে। কিন্তু ৪/৫ দিন যাবত ধানের শীষ শুকিয়ে ভিতরে চিটা হয়ে যাচ্ছে। এমুহূর্তে কর্মরত কৃষি অফিসারদের পরামর্শ জরুরী প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পিন্টু কুমার দাস বোরো ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বোরো ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়ার পর ওইসব গ্রামে গিয়ে নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান জানান, ব্লাস্ট ছত্রাক ধানের শীষ শুকিয়ে দেয়ায় চিটার পরিমাণই বেশী হয়। যে সব এলাকায় এই রোগ দেখা দিয়েছে সেখানে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় দিনে গরম, রাতে ঠান্ডা, মেঘলা আবহাওয়া, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি এবং বাতাসের কারনে কিছু কিছু এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে বোরো ফসলে ব্লাস্ট রোগ ছড়িয়ে পড়েছে । আক্রান্ত এলাকায় কৃষি বিভাগ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।