ফারুক আহমদ শামীমঃ
"মাহে রমজানের পরিচয়"
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছে সাওম বা রোযা। একজন ব্যক্তির আধ্যাত্মিক ও সামাজিক উন্নতি সাধনে রোজার গুরুত্ব অপরিসীম।
রোজা আমাদের আত্মশুদ্ধি ও নৈতিকতার শিক্ষা দেয়। বছর ঘুরে সমাগত মাহে রমজান। রমজান আসার আগেই আমাদের মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতিনেওয়ার প্রয়োজন। রমজান মাসে বান্দার জন্য রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের ঘোষণা করা হয়েছে। অতএব, রোজা পালনের মাঝ দিয়ে এ মাসে আমাদের ইবাদত বন্দেগিতে আল্লাহর দরবারে সপে দিতে হবে।
রোজা বা সাওমের পরিচয় সাধারণ লোকেরা মনে করে যে, সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত না খেয়ে থাকা আর তারাবিহর নামাজ পড়াই বুঝি রোজা। অথচ আমাদের পুরো শরীরের আলাদা আলাদা রোজা রয়েছে। রোজার প্রকৃত সংজ্ঞা জানা না থাকার কারণে আমরা এর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি না।
সাওম আরবি শব্দ, ফার্সীতে রোজা, বাংলায় উপবাস থাকা, বিরত থাকা, সাধনা করা ইত্যাদি। যদিও রোজা ফার্সী শব্দ তবুও এটিই আমাদের দেশের প্রচলিত ভাষা। পরিভাষায় রোজা হলো-
জমহুর ওলামায়ে কেরামের মতে, নির্দিষ্ট শর্তাবলির মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কাজ থেকে বিরত থাকার নাম সাওম বা রোজা।
আমার মতে, নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পন্থায় সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পাপাচার, পানাহার ও কামাচার থেকে আত্মসংযম করে থাকাই সাওম বা রোজা।
"মাহে রমজান যেভাবে কাটাবেন"
রমজান মাসকে সুন্দরভাবে কাটাতে ছোটখাট পরিকল্পনা সাজিয়ে নিতে পারেন। এতে ইবাদাতের এই মাসটি অধিক ফলদায়ক হবে ইনশাআল্লাহ। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া কোন কাজই পুরোপুরি সফল হয় না।
প্রথমেই সঙ্কল্প করে নিন আপনি এবারের রমজানটা অন্যান্য রমজান থেকে বেশি ইবাদাতে কাটাবেন। সুদৃঢ় সঙ্কল্প আপনাকে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এক ধাপ এগিয়ে দিবে।
সারাবছর যাদের তাহাজ্জুদ পড়ার সৌভাগ্য হয় নি তারা এই মাসে সুযোগটি গ্রহণ করতে পারেন। কারণ সেহরি খাওয়ার জন্য আমাদেরকে তাহাজ্জুদের সময়েই ঘুম থেকে উঠতে হয়। সুতরাং খাবার খাওয়ার আগে কয়েক রাকাত তহাজ্জুদ পড়ে নিন।
ইফতারির আগ মুহর্তে দুআ কবুল হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই ইফতারির ব্যবস্থাপনাগত কাজকর্ম আগেভাগে শেষ করে ইফতার সামনে নিয়েই দুআ করতে বসুন।
রমজান হলো কুরআন নাযিলের মাস। এই মাসে যতো বেশি পারা যায় কুরআন তিলাওয়াত করুন। ধীরেসুস্থে তারতীলের সাথে কুরআন তিলাওয়াত করুন। অনেকে রমজান মাসে খতম উঠানোর জন্য খুব তাড়াহুড়ো করে তিলাওয়াত করে। ফলে তিলাওয়াতটা বিশুদ্ধ হয় না।
"যেভাবেই হোক এক খতম দিতে হবে" এই ধরণের মানসিকতা পরিহার করে আস্তেধীরে পড়ুন। আস্তেধীরে পড়ে খতম করার চেষ্টা করুন। নয়তো যতোটুক হয় তাতেই সন্তুষ্ট থাকুন। মনে রাখবেন, পরিমাণের চেয়ে গুণগতমান বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
যারা দেখে কুরআন পড়তে পারেন না তারা কুরআন শিক্ষা করার জন্য এই মাসকে বেছে নিন। সেই সাথে দেখে পড়তে পারেন না বলে তিলাওয়াত থেকে বঞ্চিত না থেকে যতোগুলো সুরা আপনার মুখস্ত আছে সেগুলোকেই বারবার পড়ুন। হোক সেটা ছোটছোট সুরা। এতেও আপনার কুরআন তিলাওয়াত হয়ে যাবে। অনেকেই দেখে পড়তে না পারার কারণে কুরআন তিলাওয়াত করা থেকে দূরে সরে থাকে। অথচ এটা নিরেট বোকামি।
এই মাসে কুরআনের কিছু নির্বাচিত অংশ মুখস্ত করার প্রতি মনোযোগ দিন। যেমন আয়াতুল কুরসি, সুরা ইখলাস,শেষের দিকের ছোটছোট সুরাগুলো, সুরা ইয়াসিন, সুরা মুলক, সুরা আর-রহমান ইত্যাদি।
প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াতের পাশাপাশি তিলাওয়াতকৃত অংশ থেকে কিছু অনুবাদ- সাথে সামান্য তাফসীর থাকলে আরও ভালো হয়- পড়ে নেবার চেষ্টা করুন। যাতে মন্ত্রের মতো কেবল তিলাওয়াতে আপনার কুরআন চর্চা সীমাবদ্ধ না থাকে। তিলাওয়াতে কুরআনের সাথেসাথে তাদাব্বুরে কুরআন বা কুরআনের শিক্ষা জানা ও তা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করার আমলটুকুও হয়ে যায়।
যেসময়টুকু ক্লান্তির কারণে শুয়ে বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন সেসময়টুকু মনে মনে ইস্তিগফার ও যিকির-আযকারে ব্যায় করুন। যাতে বিশ্রামের সময়টুকুতেও আপনি ইবাদাতে মগ্ন থাকতে পারেন।
যতো পারা যায় কথা বলা কমিয়ে দিন। কথা বললেই গীবত-শেকায়াত, মিথ্যা ও হাসি-তামাশার রাস্তা উন্মুক্ত হয়ে যায়। তাই কথা কম বলুন। নিরাপদ থাকুন। আপনার রোজাকে সতেজ-সজীব রাখুন।
রমজান মাসে বেশি বেশি দুআ করুন। ইস্তেগফার করুন। দান-সাদাকাহসহ অন্যান্য নেকির কাজগুলোও সাধ্যানুসারে বেশি বেশি করুন। যতোবেশি পারা যায় ইবাদাতের মাধ্যমে এই মাসকে সাজিয়ে তুলুন।
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের সবাইকে রোজা সুস্থভাবে নেক আমলের সহিত পালন করার তাওফিক দান করুক, আল্লাহুমা আমীন।
লেখক
হাফেজ ফারুক আহমদ শামীম
হিফ্জ বিভাগীয় প্রধান
রৌশন ফকির দরগাহ মাদরাসা
ছাগলনাইয়া, ফেনী।