দিদার মজুমদারঃ শিক্ষক ও বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা এ.টি.এম ছরওয়ার হোসেন হাজারী যিনি সাব স্যার নামেই সমাদৃত এলাকার সকলের কাছে।বিরিঞ্চি কামাল হাজারী বাড়ীর মরহুম অাব্দুল মজীদ সাহেবের ষষ্ঠ পুত্র।দেখতে-দেখতে জীবনের ৭৮ টি বসন্ত পার করেছেন এরই মধ্যে।এখন পর্যন্ত কথার মধ্যে কোন ক্লান্তিবোধ নেই ওনার কাছে।সাপ্তাহিক হকার্সের সাক্ষাতকারে কথা হচ্ছিল তাঁর সাথে৷ বিরিঞ্চি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক তিনি।তিন কন্যা ও দুই পুত্র সন্তানের জনক।জীবন সংগ্রামে কোন প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি অাছে কিনা জিঙ্গেস করলে উঠে আসে এক পারিবারিক করুন কাহীনি।জীবনে শিক্ষকতা পেশা বেঁছে নিয়েছেন আদর্শবান শিক্ষার্থী তৈরি করতে।ওনার জীবনের শ্রম আর সময় ব্যায় করে চেষ্টা করেছেন প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার পাশাপাশি আদর্শবান ছাত্র/ছাত্রী হিসেবে গড়ে তুলতে।ঠিক তেমনি নিজেও থেকেছেন আদর্শবান শিক্ষক হিসেবে সমাজের সর্বস্তরের চোখে।অার্থিক ভাবে তিনি স্বচ্ছলতা কখনওই পাননি এবং তা নিয়ে নেয় তেমন কোন দুঃখ কিংবা প্রশ্ন।কিন্তু পেয়ে গেছেন মানুষের ভালোবাসা,সম্মান,শ্রদ্ধা যা বর্তমানে বৃদ্ধাসময়েও পাচ্ছেন।এর মাঝেই হুহু করে কেঁদে উঠে বলছিলেন পারিবারিক কিছু সমস্যা কিংবা কষ্টের কথা।বর্তমানে সংসারে কোন অায়ের উৎস নেই।ওনার দুই সংসার প্রথম সংসারে তিন মেয়ে সীমা,শিখা,সিমলা বিয়ে পর শশুড়বাড়িতে সংসার নিয়ে ভালোই অাছে আর বড় ছেলে রিয়াদ সে প্রবাসী।২য় সংসারে আছে এক ছেলে এক মেয়ে।ছোট ছেলে মোঃ রাকিব হোসেন হাজারী ফেনী বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.বি.এ পড়ছেন।স্যারের আয় কিংবা পরিবারের অায় বলতে ওই মাসিক যৎসামান্য পেনশনের টাকা। যা দিয়ে ঔষধ খরচই ঠিকমতো চলে না।ওনার দুই পুত্রের মধ্যে বড় ছেলে মোঃ রিয়াদ হোসেন হাজারী।সে বর্তমানে একজন প্রবাসী।বর্তমানে ৪ বছর যাবৎ পরিবারের কারো খোঁজ খবর রাখেননা।কারনটি জানতে চাইলে বলেন কিছু পুরোনো কথা।স্যার এর দুটি সংসার।প্রথম সংসারে আছেন দুই মেয়ে সীমা,শিখা ও ছেলে রিয়াদ।প্রথম স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা ১৯৮৫ সালে উপরে উল্ল্যখিত দুই মেয়ে এক ছেলে রেখে মারা যান।তার মৃত্যুর পর শিক্ষক ছরওয়ার ১৯৮৮ সালে পুনরায় জোহুরা খাতুনের সাথে বিবাহ বন্ধনে অাবদ্ধ হোন।সেই সংসারে জন্ম নেয় দুই ছেলে মেয়ে সিমলা ও রাকিব। মোটামুটি অভাবের সংসারে সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল।দ্বিতীয় স্ত্রী তাঁর পূর্বের তিন সন্তাকে নিজের মতন করেই মানুষ করে বড় করেছে।দুই মেয়েকে বিয়েও দেন ভাল পরিবার দেখে যেখানে বর্তমানে মেয়েরা সুখে সংসারও করছে।স্যার আরো জানান তিনি ২০০৩ সালে শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসরে যান।সংসারের কথা ভেবে প্রথম সংসারের বড় ছেলে রিয়াদকে অনেক কষ্টে দেশের বাইরে পাঠান।বিদেশ ফাঁড়ি দিয়ে বড় ছেলে রীতিমতো টাকা দিতে না পারলেও মাঝে-মাঝে যা দিত তা দিয়েও সংসার চলতো৷২০১৬ সালে রিয়াদ দেশে অাসলে জুন এর ৬ তারিখে ইয়াসমিন অাক্তার সুমির সাথে তার বিয়ে দেন। ২০১৬ এর সেপ্টেম্বরে রিয়াদ প্রবাসে পূণরায় ফিরে যায়।প্রবাসে যাওয়ার পর থেকেই বড় ছেলের স্ত্রী সুমীর বেপরোয়া অাচরন শুরু হয়।নানান রকম অশান্তি সংসারে চালাতে থাকে,এক পর্যায়ে আমার নামীয় পুরো সম্পত্তি লিখে দিতে বলে,সে সঙ্গে পেনশনটিও সুমীর নামে করে দিতে বলে।এতে ছেলে রিয়াদের সাথে যোগাযোগ করে প্রতিকারের চেষ্টা করলে তা সে করেনি বরং সংসার সে চালায় সংসারের সবকিছুই তার এমন দাবি করে।স্যার জানান বাড়ীর মানুষ থেকেও বিষয়টি নিয়ে তেমন কোনো প্রতিকার পাননি।রিয়াদ বরাবরই তার স্ত্রীকে সাপোর্ট করে চলে।একটা সময় বাড়তে থাকতে সংসারে কলহ জটিলতায়।রিয়াদের স্ত্রী বিপরোয়া হয়ে হুমকি দিতে থাকে আমাকে নারী নির্যাতনের মামলায় ফাঁসাবে।সব শেষে পারিবারিক নানান ক্ষতি করার কথা ও নারী নির্যাতনের মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়ায় আমি এক পুলিশের এস.অাইকে জানাই।তিনি আমাকে একটি জি.ডি করার পরামর্শ দেন সুমীর বিরুদ্ধে।তাই বাধ্য হয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে ছেলের বউ সুমীর বিরুদ্ধে জি.ডি(এস.ডি.অার-১৯০৯) করি। দুইদিন পর থানা থেকে পুলিশ তদন্তে এসে ঘটনার সত্যতা পান এবং স্যারকে সহায়তার অাশ্বাস দেন। এরপর সুমী তার বাবার বাড়ী চলে যায়।এ বিষয়ে ছেলে রিয়াদের সাথে আর কোনো কথা হয়নি।২০১৭ সালের ডিসেম্বরের ৩০ তারিখে সুমি পূণরায় বাড়ী আসে এবং তার বাবার বাড়ী থেকে অানা জিনিসের নামে অনেক জিনিস পত্র নিয়ে যায়।উল্লেক্ষ্য এরই ভিতর ২০১৮ সালে রিয়াদ দেশে অাসে কিন্তু বাড়ীতে অাসেনি এবং পরিবারের কারো কোন খোঁজ খবর নেয়নি।কিন্তু বাড়ীর বিভিন্ন মানুষ তার কাছে কথা চালান করলে তার বউ অার সে বিভিন্ন নম্বর থেকে কল করে গালমন্দ করে এবং বিভিন্ন হুমকি প্রদান করে।স্যার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলেন,সন্তানদের জন্য তিনি ২য় বিয়ে করেন।তাঁর ১ম স্ত্রী(রাজিয়া সুলতানা) এর প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখে তাঁর ২য় স্ত্রী (জহুরা খাতুন)সংসারের হাল ধরেন।সন্তানের মানুষ করার চেষ্টা করেছেন।কিন্তু কার প্ররোচনায় বড় ছেলের এমন করেছে তা আমি জানি না।তিনি বলেন অামি বিভিন্ন ভাবে শুনতে পাই,অামার বড় ছেলে অামার মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছে বাড়ী দখল নেয়ার জন্যে। অনেক অাশা করেছিলাম দুই ছেলে একসাথে থাকবে।তা অার হলোনা। ছোট ছেলের অায় দেখা হবে কিনা জানিনা।কিন্তু স্ত্রী জোহুরা খাতুন ও রাকিবের ভবিষ্যৎ ও নিরাপত্তার খাতিরে বাড়ীর ৪.৮০ শতাংশের মধ্যে ৩.২৫ শতাংশ জায়গা রেজিস্ট্রেশন করে হেবা করে দিয়েছি।অার বাকী অংশে সবার অধিকার থাকবে। ছেলেকে ক্ষমা করতে পারবেন? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন,যে ছেলে সৎ মা অার সৎ ভাই-বোন বলে এড়িয়েও নিজের বাবা অার বোনদের খবর নেয়না,ভরনপোষণ দেয়না। সন্তানের দায়িত্ব পালনের চেয়ে মানসিক যন্ত্রনায় রাখে।তেমন সন্তানকে যদি অাল্লাহ্ ক্ষমা করতে পারেন তাহলে অামিও পারবো তবে তার বউ এর কোন ক্ষমা নেই এবং অামার কোন কিছুতেই তার অধিকার থাকবেনা,অামি শুধু চাই দুটো ডাল-ভাত খেয়ে নিশ্চিন্তে চোখ বুজতে।সর্বশেষে শিক্ষক ছরওয়ার হোসেন সাপ্তাহিক হকার্স পত্রিকার সকল পাঠকের কাছে সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন।