ইয়াছির আরাফাত রুবেল
ফেনী পৌরসভার সুলতানপুর এলাকায় ১৯৬৬ সালে তৎকালীন ফেনীর মহকুমা হাকিম এ জেড খান (সিএসপি) তৎকালীন মুসলিম ভেরিয়েল বোর্ড ফেনীর মালিকানাধীন মুসলিম কবরগাহটি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে ফেনী পৌর কবরস্থান হিসেবে পরিচিত। এ কবরস্থানের প্রায় অর্ধেক জায়গায় দখল করে রেখেছে স্থানীয়রা। কেউ গরুর বাথান, কেউ খড়ের গাদা নির্মাণ করে তা দখল করে রেখেছে। ফেনী পৌরসভার নজরদারি না থাকায় কবরস্থানের বাকী অংশটুকুও ঘন ঝোপঝাড়ে ভরা। যার কারণে রাস্তার পাশে ১০ ফুটের ভিতরেই একটি কবরের উপর শত শত কবর দেয়া হচ্ছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুলতানপুরের পৌর কবরস্থানের সীমানার ভেতর রাস্তার পশ্চিম অংশের পুরো কবরস্থানটিই স্থানীয়রা অবৈধভাবে গরুর চারণ ভূমি হিসেবে ব্যবহার করছে। সেখানে তাদের গরু লালন পালনের জন্য বাথান ও খড়ের গাদা নির্মাণ করেছেন। স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা যায়, কবস্থানের একটি অংশ দখল হয়ে যাওয়ায় পূর্বে অংশের খালি জায়গায় প্রতি সাপ্তাহে প্রায় ৪-৫ জন অজ্ঞাত মরহেদ দাফন করা হয়। পূর্বের অংশের বেশির ভাগ জায়গটি ঘন জঙ্ঘলে ভরপুর হয়ে থাকায় খালি জায়গাতে একটি উপর আরেকটি মরদেহ দাফন হচ্ছে। বেশির ভাগ মরদেহ দাফনের সময় আরেকটি মরদেহ উঠে আসতে দেখা যায়। আর মরদেহ দাফনের কোন নিয়ম নীতিও পালন করা হয় না এ কবরস্থানে। মরদেহগুলো ফেনী পৌরসভার ময়লার গাড়ীতে করে আনা হয় এবং পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মীরা তড়িগড়ি করে দায়সারাভাবে মরদেহগুলো দাফনের কাজ সম্পন্ন করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আলম জানায়, মরদেহ কবর দেয়ার যে নিয়ম রয়েছে তার কিছুই মানা হয় না। প্রায় কবরই সামান্য মাটি খুড়ে কোন রকম মাটি চাপা দেয়া হয়। এখানে মরদেহ গোসল দেয়া হয় না। পরিমাণ মত বাঁশ বা চাটাই ও দেয় না। দীর্ঘদিন কবরের জায়গা সংস্কার না করার ফলে ঝোপঝাড়ে পরিণত হয়েছে এখানকার বেশির ভাগ যায়গা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় জানায়, করবস্থানের একটি বড় অংশ ঝোপঝাড়ে পরিণত হওয়ায় সন্ধ্যার পরপরই এখানে চলে মাদক বেচাকেনা ও সেবনের আড্ডা। মাদকসেবীরা এ স্থানটিকে মাদক সেবনের মিলন মেলায় পরিণত করে। যা তাদের কাছে একটি অভয়ারণ্যে স্থান হিসেবে পরিচিত।
ফেনী পৌরসভা থেকে কবরস্থনের রক্ষণা বেক্ষণের দায়িত্ব থাকা মোঃ আলির জানান, দীর্ঘদিন কবরে জায়গা সংস্কার না করার ফলে ঝোপঝাড়ে পরিণত হয়েছে এখানকার বেশির ভাগ জায়গা। এ ব্যাপারে আমি পৌর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। গোসলের প্রসংঙ্গে তিনি জানায়, এখানে কোন ধরণের পানির ব্যবস্থা নেই, লাশের খাটিয়া নেই, আমি একা, তাই এসব সম্বব হয় না। তিনি আরো জানান, কখনো কখনো জানাজার নামাজের জন্য লোক পাওয়া যায় না তাই অনেক সময় জানাজা দিতে পারি না।
স্থানীয়রা ফেনী পৌর কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্টদের নিকট অর্ধশত বছরের পুরনো এ কবস্থানটির চারদিকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, রাতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, কবরস্থানের ভিতরের ঝোপঝাড় পরিস্কার ও মরদেহ গোসলের জন্য পানির ব্যবস্থা করার জন্য জোর দাবী জানায়।