বিশেষ প্রতিনিধি ঃ আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ভবিষ্যৎ গোড়াতেই যেন ধ্বংস হতে বসেছে। ভেজালে ভরা খাদ্য বাজারে আমরা সবাই ভক্ষণ করছি। তবে সবচেয়ে বেশি বিপদের মধ্যে রয়েছে শিশুরা। মানবতা বিবর্জিত কিছু মানুষ শিশু খাদ্যকেও ভেজাল থেকে নিস্তার দিচ্ছে না। যার ফলে আজকাল সচেতন বাবা-মাকে শিশু জন্মের আগে থেকেই তার নিরাপদ ভাবে বেড়ে ওঠা নিয়ে থাকতে হয় দুশ্চিন্তায়। নিয়মিত পরীক্ষা অভাব, কর্তৃপক্ষের অযোগ্যতা, বিএসটিআই’র কিছু অসাধু কর্মকর্তার উৎকোচের বিনিময়ের সুযোগ নিয়ে ফেনীতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মেয়াদ উত্তীর্ণ, ব্যাক্টেরিয়া ও ফাঙ্গাস আক্রান্ত এইসব শিশু পণ্য তুলে দিচ্ছে ভোক্তাদের হাতে। এছাড়া শিশুদের পছন্দের আইসক্রিম, আইস ললিপপ, চিপস, চকলেট, আচার সহ অন্যান্য খাবারগুলোতেও চলে কেমিক্যাল ও ক্ষতিকর রঙের ব্যবহার। স্বভাবতই শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বড়দের তুলনায় অনেক কম, তাই শিশুদের উপর ভেজাল এইসব খাদ্যের প্রভাবও পড়ছে মারাÍক ভাবে। ভেজাল খাবার খাওয়ার ফলে শিশুদের পেটের পিড়া, পেটে ঘা, আলসার, চর্মরোগ, নিয়মিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে অনেকে। দূষিত খাবারে বাচ্চাদের দেহকোষ, মস্তিষ্ক, কিডনি ও লিভার সরাসরি অক্রান্ত হচ্ছে, তাদের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে দেখা দিচ্ছে হাঁপানি রোগ, তাদের রক্ত চলাচলেও ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফেনীর শহরের ছাড়িপুর, বিসিক, রামপুরের বিভিন্ন গলিতে, তাকিয়া রোড, হাবীব ব্রাদার্স এর বাড়ী ও তার আশপাশের এলাকায় চলছে ভেজাল মিশানো শিশু খাদ্যে তৈরির কারখানা। আর এসব খাদ্য তৈরি হচ্ছে পঁচা খেঁজুর, পোকা মাকড়যুক্ত বার্মা থেকে নিম্নমানের আমদানী করা বড়ই ও তেঁতুল দিয়ে। তার সাথে যোগ হচ্ছে ঘনচিনি, গো-খাদ্য ভূষি, মিষ্টি দোকানের পরিত্যক্ত চিনির শিরা, গুড় তৈরির উচ্ছসৃষ্ট ক্যামিকেল। যা পশু খাদ্যের অনুপযোগী। এসব শিশু খাদ্য বিভিন্ন রংয়ের মোড়কে বিভিন্ন খেলনা সামগ্রীর পুরস্কার ও নগদ অর্থ দেখিয়ে শিশুদেরকে আকৃষ্ট করছে। এসব খাদ্য দীর্ঘদিন বাজারজাত করার লক্ষ্যে এমনও শুনা যায় তারা ফরমালিন ব্যবহার করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রামপুরে একটি শিশু খাদ্য তৈরির কারখানার শ্রমিক জানান, তারা নিজেরাই জানে এসব খাদ্য খেলে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়বে। কিন্তু তাদের কিছু করার নেই। তারা পেটের দায়ে এসব করছে। এসব ক্যামিকেল কোথায় থেকে কিনে আনে প্রশ্নের জবাবে বলেন, তাদের মালিক রাধের আঁধারে শিশু খাদ্য তৈরির কাঁচামাল দিয়ে যান। কোথায় থেকে আনে তা তিনি জানেন না। ফেনীর চক বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ। তাই তারা এসব শিশু খাদ্য বিক্রি করে থাকে। তবে বিভিন্ন মেলার সময় এসব বেশি কেনাবেচা হয়। তাদের সন্তানদের এসব খাদ্য খাওয়ান কিনা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জেনে শুনে কি বিষ খাওয়াবো ? আর এসব খাদ্য বিক্রি হচ্ছে ফেনী শহরের বড় বাজারের প্রায় প্রতিটি দোকানে। এছাড়াও প্রতিটি প্রাইমারি স্কুলের সামনের টং দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে এসব ভেজাল খাদ্য। ফেনীর ভিতরের বাজার ও শহরের আশপাশের এসব শিশু খাদ্য তৈরির ফ্যাক্টরী গুলোতে একাধিকবার অভিযান চালিয়ে মোটা অংকের জরিমানা করেছিলেন তৎকালীন জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা। অভিযান পরিচালনা শেষে ১০ মিনিট যেতে না যেতে পুনরায় আবার ভেজাল খাদ্য উৎপাদন শুরু হয়ে যায়। এমতাবস্থায় এসব ভেজাল শিশু খাদ্য তৈরির কারখানাগুলোতে ভেজাল পণ্যের উৎপাদন বন্ধের দাবী সচেতন মহলের।