ফেনী: ছাগলনাইয়া বর্ডার হাটে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ সভা হয়েছে। একমাস বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার (১২ ফেব্রুয়ারী) থেকে এ হাটটি পূনঃরায় চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে এ সভায়। সোমবার বিকালে যৌথ সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছাগলনাইয়া উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে ফেনীর ছাগলনাইয়া ও ভারতের ত্রিপুরায় চালু হয়েছিলো সীমান্ত হাট। নানা শর্তের বেড়াজালে এই হাট ক্রয়-বিক্রয় হতে থাকলে দিন দিন ভারতের বিক্রেতাদের পোয়াবারো হওয়ায় বাংলাদেশী বিক্রেতারা মুখ থুবড়ে বসে থাকে। বাংলাদেশী ক্রেতাদের পচন্দসই ভারতীয় নানা পন্য ক্রয় করতে ২০০ ডলারের সীমা পেরিয়ে গেলেও ভারতীয় ক্রেতারা আধা কেজি মাছ আর ২০ টাকার শুটকি মাছ ক্রয় পন্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতো।কালেভদ্রে ভারতীয় কোনো ক্রেতা ৭ কেজির বেশী পন্য নিয়ে ভারতে ডুকতে চাইলে ভারতের কাষ্টম ক্রেতা থেকে সেইসব পন্য কেঁড়ে রেখে দেওয়ার অভিযোগ উঠে।ভারত তাদের ২৮০০ জন ক্রেতাকে হাটে আসার কার্ড দিলেও প্রতি বাজারে মাত্র ১২০০ জনকে ডুকতে দিতো।আর বাংলাদেশের অগনিত ক্রেতা ডুকে প্রতিবাজারে কোটি টাকার ভারতীয় পন্য কিনে আনছে।ভারতীয় ক্রেতা ডুকতে না পারায় বাংলাদেশের পচনশীল পন্য গুলো বিক্রি করতে না পারায় মঙ্গলবারের প্রতিবাজারে লাখ লাখ টাকার পন্য নষ্ট করে ফেলে আসতে হয়। এছাড়া বাংলাদেশের কালোবাজারীরা প্রতি হাটে চট্টগ্রাম ও এর আশে পাশের জেলাগুলোতে কোটি কোটি টাকার ভারতীয় পন্য চোরাই পথে এনে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে।রয়েছে স্বর্ণ চোরা চালান করার অভিযোগ,ভারতীয় মাদক বিক্রেতারা প্রতি হাটে মাদকের টাকা আদায় করে এক সাপ্তাহ্ পর পরের হাটে ভারতে ডুকার অভিযোগ। এই রকম একজন ভারতীয় মাদক ব্যবসায়ীকে ছাগলনাইয়া থানা পুলিশ আটক করে কারাগারে পাঠান বলে ওসি মুর্শেদ জানান।এতসব অভিযোগের ভিত্তিতে চলতি বছরের জানুয়ারীর মাঝামাঝি সময় থেকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সীমান্ত হাটে তাদের ২৭ টি দোকান বন্ধ করে দেয়।দীর্ঘ একমাস বন্ধ থাকার পর টনক নড়ে দুই দেশের বাজার পরিচালনা কমিটির।বাজারে স্থিত অবস্থা ফিরে আনতে গতকাল সোমবার সীমান্তহাট দরবার হলে এক যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপরের অভিযোগ গুলো নিয়ে বিশদ আলোচনার পর আজ মঙ্গলবার থেকে বাজার পুনরায় চালু করার সীদ্ধান্ত হয়।সভায় বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ফেনী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এডিএম আক্তার উননেচা শিউলী। তাকে সহযোগীতা করেন ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিদা ফাতেমা চৌধুরী,অফিসার ইনচার্য(ওসি)এমএম মুর্শেদ পিপিএম,সহকারী কমিশনার(ভূমি) মো.কামরুজ্জামান,কাষ্টম কর্মকর্তা (সুপারেন্টেন্ড)প্রদীব দেওয়ান,ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সুদ্বীপ রায় পলাশ,রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রবিউল হক মাহবুব,মধুগ্রাম বিওপির কোম্পানী কমান্ডার রফিক উদ্দিন। ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ত্রিপুরার এডিএম সন্তোষ দাস,সিডিএম বিপ্লব দাস,ডিডিও সঞ্জিব চাকমাসহ অন্যান্য। এডিএম শিউলী তার বক্তব্যে বলেন সীমান্ত হাটে ভারতীয় মেয়াদ উত্তীন্য পন্য বিক্রি হয়,এইটি রোধ করার আহবান জানান।ইউএনও জানান হাতের তৈরি এবং গার্মেন্টেস পন্য বিক্রি করার বিধান থাকলো সে নিয়মের ব্যত্যয় হচ্ছে বলে তিনি জানান।ওসি মুর্শেদ জানান,সীমান্ত হাট দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার হচ্ছে।ভারতীয় মাদক ব্যবসায়ীরা প্রতিবাজারে বাংলাদেশে ডুকে তরুন সমাজকে নষ্ট করছে।প্রশাসনকে ব্যস্ত রাখায় দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমসীম খেতে হচ্ছে।ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুব সীমান্ত হাটে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে উভয় দেশের প্রতি আহবান জানান। বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধি আতাউর রহমান সভায় বলেন সীমান্ত হাটে অসম বানিজ্য চলছে।ভারতীয় অংশের ক্রেতাদের সীমাবদ্ধতা তুলে দিয়ে বাজার উন্মুক্ত করার আহবান সহ বিভিন্ন দাবী জানান। ভারতের এডিএম সন্তোষ হুশিয়ারী দিয়ে বলেন তার দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় এখন থেকে কোনো অনিয়ম বরদাস্ত করা হবেনা।তবে এই বাজার গুলো ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্যে চালু করা হয়নি দাবী করে তিনি বলেন দুই দেশের সম্প্রীতির বন্ধনের উদ্দেশ্য চালু করা হয়েছে।বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের ক্রেতা বাড়ানোর দাবীটি তিনি মানতে পারবেননা বলেও জানান।ভারতীয় ব্যবসায়ী প্রতিনিধি শংকর ভৌমিক জানান,ভারতীয় কাষ্টম ভারতের ক্রেতাদের হয়রানী করে অল্প কয়দিনে ৫০ লাখ টাকার বাংলাদেশী পন্য লুটপাট করে।যার প্রমান তার হাতে রয়েছে দাবী করে তিনি ভারতীয় এডিএমের নিকট এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবী করেন।জবাবে ভারতীয় এডিএম বলেন তার সীমাবদ্ধতা রয়েছে।