১৯১৫ সালে নির্মিত শহরের মাস্টার পাড়ায় কারাগারটি ছিলো জেলার একমাত্র কারাগার। ১’শ ৪ বছর পর ২০১৯ সালে এসে কারাগারটি স্থানান্তরিত হচ্ছে শহরের কাজীর বাগ ইউনিয়নের রাণীর হাট সংলগ্ন নতুন ঠিকানায়। শত বছরের পুরোনো কারাগারটি ঘিরে দীর্ঘ সময়ের কারা বন্দী এবং তাদের আত্মীয় স্বজনদের রয়েছে নানান বেদনা বিধুর স্মৃতি। এসময় যে প্রাঙ্গনটি ছিলো লোকে লোকারণ্য, নতুন ভববনে স্থানাতরের মধ্য দিয়ে তা এখন হয়ে যাবে নিষ্প্রভ এক স্মৃতিময় ঠিকানা। কারাগারটি স্থানান্তরকে ঘিরে এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রানান্তকর প্রচেষ্টা ছিল চোখে পড়ার মত। বন্ধী স্থানান্তরকে ঘিরে জেলার সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সতর্ক দৃষ্টি ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তার মাধ্যমে শনিবার (১২ জানুয়ারী) ভোর ৬ টা থেকে নতুন ভবনে প্রায় ১ হাজার বন্ধী স্তানান্তর পক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর আগে শুক্রবার (১১ জানুয়ারি) থেকে কারাগারের দলিল,দস্তাবেজ ও আসবাব পত্র স্থানান্তর হয়। শনিবার দুপুরের মধ্যে ৭৮৫ জন কারা বন্দিকে স্থানান্তরের কাজ সম্পন্য হবে বলে জানান কারা কর্র্তৃপক্ষ । এর আগে গেল বছরের ১ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নতুন কারাগারটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৩৫০ বন্দি ধারণক্ষমতার এই জেলা কারাগারটি সম্পূর্ণ সিসিটিভি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাছাড়া বন্দি ও কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য থাকছে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা। এর মধ্যে রয়েছে- একটি দ্বিতল আধুনিক হাসপাতাল, বন্দিদের কাউন্সেলিং এবং তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা। খেলার মাঠ, পুকুর, উদ্যান, স্টাফ কোয়ার্টারসহ বিভিন্ন স্থাপনাও রয়েছে। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধার এই কারাগারটি বন্দিদের বন্দি জীবনকে নিরাপদ, স্বস্তিদায়ক ও তাদের পরিশুদ্ধ করে নতুন জীবন গড়তে সহায্য করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারাগার সূত্র জানা যায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জেলা কারগার নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় রানীরহাটের সোনাপুর ও মালিপুর দুই মৌজায় নতুন কারাগার নির্মাণের জন্য সাড়ে ৭ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। জেলা গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্বাবধানে প্রায় ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন কারাগারের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এর আগে ১৯১৫ সালে নির্মিত শহরের মাস্টার পাড়ায় অবস্থিত উপ কারাগারটি ছিলো জেলার একমাত্র কারাগার। ১৯৯৮ সালে এটি জেলা কারাগারে উন্নতি হলেও বাড়েনি কোনো সুযোগ-সুবিধা। ১৭৩ জন ধারণ ক্ষমতার সাবেক কারাগারটিতে প্রায় হাজার খানেক কারাবন্ধি গাদাগাদি করে শোয়া, থাকা-খাওয়া, গোসলসহ নানা সমস্যায় দুর্বিষহ দিন পার করছেন। বন্দিদের চিকিৎসায় কারাগারে ছিলোনা কোনো হাসপাতাল। ফেনী কারাগারের জেলা কারাগারের সুপার মো: রফিকুল কাদের বলেন, কারাগারটি স্থানান্তরের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের বন্দীদের দূর্ভোগ লাগব হবে, আবাসন সমস্যার সমাধান হবে। বন্দীরা পাবে অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা। তবে নতুন কারাগারটি পরিচালনায় আরো জনবল প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে আগের কারাগারে কর্মকতা-কর্মচারী মিলে ৮৭ জনের স্থলে ৭৭ জন জনবল ছিল। নতুন কারাগারে অফিসার ছাড়াই ১১৬ জন কারা রক্ষীর প্রয়োজন পড়বে। জেলার দিদারুল আলম বলেন, আগে স্থান সংকুলান না থাকায় চট্টগ্রাম এবং কুমিল্লায় বন্দী পাঠানো হতো। বর্তমানে সে সমস্যা নেই। বন্দীদের মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত করা যাবে। এছাড়াও বন্দীদের জন্য কর্মমূখী শিক্ষা ও প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা রয়েছে। কারা উপ-মহা পরিদর্শক (চট্টগ্রাম বিভাগ) একেএম ফজলুল হক বলেন, আগের কারাগারটিতে ১৭২ জনের স্থলে প্রায় হাজার খানেক বন্দী থাকতো। নতুন কারাগারে স্থানান্তরের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান হবে। এখানে বন্দীদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা রাখা হয়েছে আশা করছি নতুন কারাগারটিতে তারা স্বাচ্ছন্দবোধ করবে।