লোকমান বিএসসি: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-১ আসনে বিএনপির দূর্গ ভাঙ্গতে মরিয়া আ'লীগ। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এ আসনে কখনো জিততে পারেনি আ'লীগ। পক্ষান্তরে ১৯৯১ সাল থেকে একটি নির্বাচন বাদে প্রতিটি নির্বাচনে জয়ী হন বিএনপি তথা খালেদা জিয়া। এবার তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। ফলে এ আসনটিতে মনোনয়ন পান ঢাকা মহানগর দক্ষিন যুবদলের সভাপতি রফিকুল আলম মজনু (ধানের শীষ)। ৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে এখান থেকে আওয়ামিলীগ প্রার্থী জাকারিয়া ভূইয়া বিজয়ী হবেন বলে ধরে নেওয়া হলেও ভোটের ফলাফলে তিনি হেরে বেগম জিয়ার কাছে। বেগম জিয়া মোট ভোট পান ৩৬ হাজার ৩৭৫ টি আর জাকারিয়া ভূইয়া পান ২৩ হাজার ২৫০ ভোট। ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়া ৬৫ হাজার ০৮৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আ'লীগের এম ওয়াজি উল্লাহ ভূইয়া পান ২৪ হাজার ১৩৮ ভোট। ২০০১ সালে ১ লাখ ০৩ হাজার১৪৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া। আ'লীগের প্রার্থী লে.কর্নেল (অব:) জাফর ইমাম বীর বিক্রম ভোট পান ৩৬ হাজার ৭৬৩ টি। পরবর্তিতে উপ নির্বাচনে বেগম জিয়ার ছোট ভাই মেজর (অব:) সাঈদ ইস্কান্দার নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে ১ লাখ ১৪ হাজার ৪৮২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন বেগম জিয়া। আ'লীগের প্রার্থী ফয়েজ আহমেদ ৫৮ হাজার ৫৫১ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করে তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিলে মহাজোট প্রার্থী শিরীণ আখতার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এ আসন থেকে বিজয়ী হন। এদিকে ২০০৮ সালে বিএনপি চেয়ারপার্সন ফেনী-১ সহ তিনটি আসনে জয়লাভ করলেও সবচেয়ে খারাপ ফলাফল করে বিএনপি। মাত্র ৩০ টি আসন পায় তারা। ফলে ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে এ আসনে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম নড়বড়ে হয়ে পড়ে। মামলা, হামলা আর দলীয় কোন্দলে নেতা কর্মীরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। অপরদিকে জেলা আ'লীগের নির্দেশনায়, বিশেষ করে জেলা আ'লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাংসদ নিজাম হাজারীর নেতৃত্বে এখানে শক্ত অবস্থানে চলে যায় আ'লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন গুলো। ফেনী-১ আসনের ৩টি উপজেলা, ২টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নে আ'লীগ প্রার্থী বিজয়ী হয়! অপূর্ণ রয়েছে শুধু সংসদীয় আসনটি। তাই আ'লীগ হাই কমান্ডের নিকট একানকার তৃনমূল আ'লীগ থেকে শুরু করে আ'লীগ ও সকল সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীদের দাবী ছিল এ আসন থেকে দলের কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হউক। তাদের দাবীর প্রেক্ষিতে প্রার্থী হতে আ'লীগ থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। পাশাপাশি সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেন জেলা আ'লীগের সহসভাপতি খায়রুল বাসার তপন এবং সদস্য ও ঢাকাস্থ ফেনী সমিতির সভাপতি শেখ আবদুল্লাহ। কিন্তু জোটগত নির্বাচনের কারনে মহাজোট থেকে নৌকার মনোনয়ন পান জাসদ (ইনু) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার। ফলে বাদ পড়েন আলাউদ্দিন নাসিম। পরবর্তীতে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন তপন। কিন্তু মাঠে রয়ে যান আপেল প্রতিকের সতন্ত্র প্রার্থী শেখ আবদুল্লাহ এবং তার পক্ষে স্থানীয় আ'লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের বৃহৎ একটা অংশ নির্বাচনী প্রচারনায় মাঠে রয়েছেন। তারা মহাজোটের প্রার্থী জাসদের শিরীন আখতারের চেয়ে সতন্ত্র প্রার্থী শেখ আবদুল্লাহকে অধিক নির্ভরযোগ্য বলে দাবী করেন। ফলে মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্টের সাথে সতন্ত্র প্রার্থী শেখ আবদুল্লাহ ও রয়েছেন সমান আলোচনায়। এ আসনে নির্বাচনী মাঠে আরও রয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক কাজী নুরুল আলম (মোমবাতি), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন মনোনীত প্রার্থী আনোয়ার উল্লাহ ভূইয়া (বটগাছ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী কাজী গোলাম কিবরিয়া (হাতপাখা), বাংলাদেশ ন্যাশনালিষ্ট ফ্রন্ট বিএনএফ মনোনীত প্রার্থী শাহরিয়ার ইকবাল (টেলিভিশন), গনফোরাম মনোনীত প্রার্থী এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী (উদীয়মান সূর্য) ও বাংলাদেশ মুসলীম লীগ মনোনীত প্রার্থী তারিকুল ইসলাম (হারিকেন)।