ইয়াছির আরাফাত রুবেল , ফেনী, ২৪ মার্চ ২০১৮
চোখে আলো নেই একই পরিবারের তিন সহোদরের। তবু তাদের দুচোখ ভরা স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন। ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের উত্তর মন্দিয়া গ্রামের মৃত মোঃ মোস্তফার তিন ছেলে সাইফুল ইসলাম(৩৫), শহীদুল ইসলাম(৩২)ও মোমিনুল ইসলাম(২৮) তাদের কথাই বলছি। জন্মান্ধ তারা। সমাজের অন্য দশজনের মতো তারা বাঁচতে চায় । ভিক্ষাবৃত্তি তাদের পছন্দ নয় ।
তিন সহোদর জানান, আমরা জন্ম থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। কিন্তু মানুষের কাছে হাত না পেতে চেষ্টা করছি নিজের পায়ে দাঁড়াতে। সরকারী বেসরকারী কোন সংস্থা বা স্বহৃদয়বান ব্যক্তি যদি আমাদের বিনাসুদে কিছু টাকা ঋণ হিসেবে দেয় তাহলে আমরা কাজ করে স্বাবলম্বী হতে পারব।
তিন সহোদরের জননী সকিনা বেগম জানান, তিন ছেলেকে বিয়ে দিয়েছি। শুধু শহিদুলের একটি ছেলে আছে । অন্যদের কোনো সন্তানাদি নেই। আট সদস্যের সংসার । প্রায় দুই যুগ আগে মারা যায় ওদের বাবা মোঃ মোস্তফা। তিন প্রতিবন্ধী শিশুকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ি ।
কোনো কাজকর্ম খুঁজে পাইনা। পরে ভাইদের দেয়া সাহায্যে ও নিজের তৈরী করা ডালা, কুলা, মাছধারার ছাঁইসহ গৃহস্থালী জিনিস বিক্রি করি। তা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে সন্তানদের বড় করতে থাকি। কিন্তু বয়স বেড়ে যাওয়ায় শ্বাসকষ্ট রোগটা বেড়েছে। ঔষধ কেনার টাকা নেই । চিন্তায় মরে যাচ্ছি শরীরকে দিব না পেটকে দিব এই ভেবে । এমনিতে সংসারে আট সদস্যের ভরণ-পোষণের জন্য যথেষ্ট নয় ।
বড় ছেলে সাইফুল ১৩ বছর হতে মায়ের দেয়া সামান্য পুঁজিতে গ্রামের বাড়ী বাড়ী গিয়ে চকলেট, চুইংগাম, আচার বিস্কুট ইত্যাদি বিক্রি করা শুরু করে। বাকী দুই প্রতিবন্ধী ভাই শহীদ ও মোমিনকে তার এই ক্ষুদ্র ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়। তিন ভাইয়ের সামান্য সঞ্চয় ও মায়ের ডালাকুলা বিক্রি করা কিছু আয় দিয়ে এবং ছাগলনাইয়া উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে ৪০হাজার টাকা নিয়ে তারা বাড়ীর সামনে একটি কনফেকশনারী দোকান চালু করে।
দোকান করে প্রতি মাসে সংসার ভালোই চলছিল । কিন্তু এনজিও’র কিস্তির টাকা দেয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে। এখন সেই দোকানটিও বন্ধ। পুঁজির অভাবে দোকানটি চালাতে পারছিনা ।
সরকারী বেসরকারী কোন সংস্থা বা স্বহৃদয়বান ব্যাক্তি যদি আমাদের বিনা সুদে কিছু টাকা ঋণ হিসেবে দেয়। তবে আমরা কাজ করে স্বাবলম্বী হতে পারব।