ছাগলনাইয়া থেকে ফিরে ইয়াসির আরাফাত রুবেল>>
বিলুপ্তির পথে ছাগলনাইয়া উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের উত্তর ও দক্ষিণ আঁধার মানিক গ্রামের শত বছরের ঐতিহ্যবাহীমৃৎ শিল্প। এক সময় এ গ্রামসহ আসপাশের বিভিন্ন এলাকায় শত-শত পরিবার প্রত্যক্ষভাবে এ শিল্পের সাথে জড়িত ছিল।
আধুনিকাতার ছোঁয়া ও কালের পরিক্রমায় আঁধার মানিক গ্রামের ঐতিহ্যবাহী পাল বংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে এখানে মাত্র ৪০ থেকে ৫০টি পরিবারের বসবাস। কিন্তু মাত্র ১০ থেকে ১৫ টি পরিবার অনেক কষ্টে তাদের পূর্বপুরুষদের এ পেশা ধরে রেখেছেন। প্রাতিষ্ঠানিক কোন প্রশিক্ষণ ছাড়াই মহিলা ও পুরুষ শিল্পীরা হাতের ছোঁয়ায় সুনিপুর্ণভাবে মাটি দিয়ে চাকার সাহায্যে যাবতীয় মৃৎশিল্প তৈরী করে। এরপর তা রোদে শুকিয়ে জলন্ত চুল্লিতে পৌড়ানো হয়।
একসময় এখানকার পালেরা খোলা, হাড়ি, পাতিল, কলসি, ব্যাংক, বিভিন্ন পিঠা তৈরীর চাঁচ, পুতুলসহ ছোট-ছোট খেলনা ইত্যাদী সব জিনিসপত্র তৈরী করত। এখানকার তৈরী মৃৎশিল্পের অনেক সুনাম ও সুখ্যাতি থাকলেও এখন শুধুমাত্র দধির পাত্র ও পিঠার খোলা তৈরি করে কোন রকমের জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।
তবে বর্তমান বংশধররাে এ ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্পের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে ।
ফলে মৃৎ শিল্পের নিপূন কারিগরেরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে এখন অনেকটা অসহায় ও মানবেতর জীবন যাপন করছে।
পুরুষরা অনেকে এ পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় চলে গেছেন।
মৃৎ শিল্পের কারিগর নিবারন পাল বলেন, এ শিল্পের মূল উপকরন হল মাটি। এক সময় বিনে পয়সা মাটি পাওয়া গেলেও বর্তমানে টাকার বিনিময়েও মাটি পাওয়া যাচ্ছে না আবার যা পাওয়া যাচ্ছে অধিকমূল্য দিয়ে কিনতে হচ্ছে।
মটির তৈরী জিনিসপত্র সে রকম দামে বিক্রি করতে পারছে না। মাটির এ সকল পাত্রের চাহিদাও আগের মত নেই।
নিবারন পালের স্ত্রী সুখি রানীন পাল বলেন, সব কিছুর দাম যে অনুপাতে বেড়েছে সে অনুপাতে মাটির তৈরি সামগ্রীরদাম বাড়েনি। পূর্ব পুরুষের এই পেশা বাঁচিয়ে রাখতে গিয়ে দ্রব্য মূল্যের উর্দ্ধগতির বাজারে পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটছে আমাদের। বর্তমানে মাটির তৈরি তৈজসপত্রের স্থান দখল করে নিয়েছে আধুনিক প্লাস্টিক অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি সামগ্রী।
এসব সামগ্রীর দাম বেশি হলেও অধিক টেকশই হওয়াতে মানুষ মাটির তৈজসপত্র না কিনে প্লাস্টিক, মেলামাইন ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি সামগ্রী কিনছে। তারা আরো বলেন, মৃৎ শিল্পের এখন অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি বের হয়েছে যা আমরা আর্থিক সমস্যার কারনে কিনতে পারছিনা।
সরকারীপৃষ্ঠপোষকতা ও বেসরকারীভাবে সহযোগিতা পেলে হারিয়ে যাওয়া মৃৎ শিল্পের অতীত ঐতিহ্য পুনরাই ফিরিয়ে আনা সম্ভব এমনটি আশা করছেন এখানকার পাল সম্প্রদায়ের মানুষেরা।