ফেনীর মতিউর রহমান পলাশের বাড়ি সোনাগাজী উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের আউরারখিল গ্রামের বাড়িতে রাতভর ছিল বেদনার্ত হাহাকার। আগের দিন বিকালে স্বজনরা ঢাকা থেকে তার লাশ বুঝে নিয়ে রাত ১১টায় রওনা হয়ে বুধবার ভোর রাত সাড়ে চারটায় বাড়িতে পৌঁছে। সকাল থেকে দূর দূরান্তের আত্মীয় স্বজনের ভিড় জমে পলাশের বাড়িতে। উপস্থিত হন সরকারী কর্মকর্তারাও। বেজে ওঠে বিদায়ের ঘন্টা!
সকাল সাড়ে ১০টায় সবাইকে কাঁদিয়ে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে পলাশকে সমাহিত করা হয়। এ সময় তার স্বজনরা বেদনায় হয়ে পড়েন মূহ্যমান। মায়ের ইচ্ছামত শুধু তিনিই নিজের নাড়ীছেঁড়া ধনকে দেখলেন শেষবারের মত। আর কাউকে তার লাশ দেখতে দেয়া হয়নি। যদিও নিহত পলাশের চেহারা তেমন বিকৃতি ঘটেনি। সকাল থেকে নিহতের গ্রাম আউরারখিলের বাতাস যে বেদনায় ভারী তা স্বজনদের মুখের দিকে তাকালেই বোঝা যাচ্ছিল। সবার ভেতর চলছিল এক গভীর অনুক্ত শোকের মাতম। শুধুই প্রিয়জন হারানোর বেদনা । আবেগঘন পরিবেশে সবার চোখে কোণে অশ্রু বেয়ে পড়লো হারানোর বেদনায় । মানুষ মরে যায় তবে অকালে মৃত্যুর শোক কিছুটা শোকবহ ।
সকাল ১০টায় আলোচিত বিমান দুর্ঘটনায় নিহত পলাশের (২৯) জানাজায় উপস্থিত ছিলেন সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিনহাজুর রহমান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনাম, পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম, বগাদানা ইউপি চেয়ারম্যান এছহাক খোকন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইলিয়াছ। এ সময় পরিবারের পক্ষে কথা বলেন পলাশের বড় ভাই শহীদুল্লা মিন্টু ও সেজো ভাই মকসুদুর রহমান মনজু। প্রায় দু’হাজার লোক জনাজায় অংশ নেয়। পলাশের জানাজা পড়ায় তার আত্মীয় মাওলানা হারুন অর রশিদ।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পলাশের মৃতদেহ বুধবার ভোর ৪টায় ফেনীর লালপুলে পৌঁছলে সোনাগাজী থানা পুলিশ লাশ বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। এর আগে মঙ্গলবার বিকাল চারটার পর ঢাকায় আর্মি স্টেডিয়ামে সরকারী আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে পলাশের লাশ বুঝে নেয় তার সেজো ভাই মকসুদুর রহমান মনজু ও নেপালে লাশ শনাক্তকারী ভাগ্নে আশরাফুল ইসলাম জীবন। সেখান থেকে পলাশকে নেয়া হয় তার কর্মস্থল তেজগাঁওয়ে রানার অটোমোবাইল কোম্পানিতে। পলাশ এ প্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিনিয়ার ছিল। সেখানে পুনরায় জানাজা ও বিদায়ী শ্রদ্ধার পর ওই বেসরকারী কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় পলাশের ভাই, ভাগ্নেসহ সাত স্বজনকে ফেনীতে পৌঁছে দেয়। এ সময় কোম্পানির এক কর্মকর্তাকেও সঙ্গে দেয়। জানা গেছে, এ কোম্পানির আরো দু’জন ব্যক্তি এ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। লাশবাহী গাড়ির ব্যবস্থাপনায় ছিল বেসরকারি বিমানসংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।
মতিউর রহমান পলাশ ঢাকায় বেসরকারি কো¤পানি রানার অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার অফিসার হিসাবে চাকরি করতেন। কোম্পানির প্রয়োজনেই তাকে সেদিন ঢাকা থেকে নেপাল যেতে হয়েছিল। পলাশ আউরারখিল গ্রামের মৃত মো. আমিন উল্ল্যাহ মিয়ার পুত্র। ৫ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে পলাশ সবার ছোট। ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ডিপ্লোমা পাশ করে ঢাকায় চাকুরী নেন। পরিবার সম্প্রতি তার বিয়ের উদ্যোগ নিচ্ছিল।