জাকের হায়দার সুমন
“রানার ছুটছে তাই ঝুম ঝুম ঘন্টা বাজছে রাতে”। সেই ডাকহরকরা বা রানারকে একবিংশ শতাব্দিতে আর এই শ্লোগানে দেখা যায় না। ডাক বিভাগের বা পোস্ট অফিসের সকল কাজ এখন অতীত হয়ে গেছে। মোবাইল ও অনলাইনের যুগে তালাকের চিঠি ছাড়া আর কোন চিঠি আসে না পোস্ট অফিসে। অলস সময় কাটান ডাক হরকরা বা পোস্টম্যানগন। তবে প্রবাদ আছে বাঙ্গালীকে সাগরের ঢেউ গুনতে দিলেও ঘুষ খায় তার প্রমান ছাগলনাইয়া পোস্ট অফিস বা ডাক কার্যালয়। সরকার ডাক বিভাগকে সচল রাখতে নানা প্রদক্ষেপ দিয়ে রেখেছে সারা দেশের ডাক বিভাগের কার্যালয় গুলোতে। এর মধ্যে সঞ্চয়ী আমানত, ডাক মোবাইল ব্যাংকিংসহ লাভজনক বিষয়গুলো। গ্রাহকেরা এফডিআর, মেয়াদীর লভ্যাংশ ও সঞ্চয়পত্র ক্রয়-বিক্রয় বা ভাংতে গেলে ছাগলনাইয়া ডাক বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচরীরা গ্রাহকের কাছ থেকে উপরি নিতে ভুল করেন না। না দিলে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও স্ববেতনে স্বপদ থেকে পদোন্নতি নিতে ও বদলি হতে একই বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সিবিএ’র নেতাদের বাড়তি টাকা দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। ডাক বিভাগে চালু রয়েছে বিভিন্ন প্রকার সঞ্চয়ি আমানত হিসাব। এর মধ্যে ১ লাখ টাকায় ৩ বছর মেয়াদীর লভ্যাংশ ৩০ হাজার ৪শ’ ৫৬ টাকা, ১ লাখ টাকা ৩ মাস পর লভ্যাংশ ২ হাজার ৬শ’ ২২ টাকা, ১ লাখ টাকার প্রতি মাসে ৯শ’ ১২ টাকা লভ্যাংশ দেয়া হয়। বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজন তাদের কষ্টার্জিত অর্থ পোস্ট অফিসে সঞ্চয় করতে গেলে বা মেয়াদ শেষে লভ্যাংশ আনতে গেলে অথবা সঞ্চয়পত্র কিনতে বা ভাংতে গেলে পোস্ট মাস্টার লাভের অংশে ভাগ বসান। পোস্ট মাস্টার ও তার সহকারীদের ভাগ না দিলে কালক্ষেপন করে পরে আসেন, পরদিন আসেন বলে নানা তালবাহানা করার অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। লভ্যাংশের প্রতি হাজারে পোস্ট মাস্টার শফিকুর রহমানকে দিতে হয় ২শ’ টাকা। সঞ্চয়পত্রের বেলায় দিতে হয় লাখে ১ হাজার টাকা।ছাগলনাইয়া বালিকা বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আবু তৈয়ব ৫ লাখ টাকার ৩ মাস মেয়াদী আমানত রাখেন পোস্ট অফিসে। প্রতি ৩ মাস পর টাকা তুলতে গেলে তার থেকে ১ হাজার টাকা করে কেটে রাখেন পোস্ট মাস্টার। এই ব্যাপারে শিক্ষক তৈয়ব প্রতিবাদ করলে পোস্ট মাস্টার শিক্ষককে হয়রানি করার হুমকি দেন বলে ভুক্তভোগী শিক্ষক জানান। একইভাবে ছাগলনাইয়ার ব্যবসায়ী নূর নবী তার শালী মোর্শেদাকে নিয়ে প্রতিমাসে এফডিআর এর লভ্যাংশ তুলতে গেলে ৫শ’ টাকা করে কেটে রাখেন বলে নবী অভিযোগ করেন। রাধানগর ইউনিয়নের প্রবাসী জসিম তার মৃত স্ত্রীর সঞ্চয়পত্র ভাংতে গেলে ৩০ হাজার টাকা না দিলে তাকে তার স্ত্রীর টাকা দিবেন না বলে হুমকি দেন। পরে ২০ হাজার টাকায় রফা করে প্রবাসী ৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গেন। একই অভিযোগ করেন উপহার স্টোরের বিধান শর্মা, ঝর্ণা মেডিক্যালের ঝন্টুসহ অন্যান্যরা। এছাড়া স্থানীয়ভাবে পদোন্নতি বা সুবিধাজনক স্থানে বদলি করিয়ে দেয়ার বানিজ্য চলছে দেদারসে। স্ববেতনে পোস্টম্যান থেকে মাঠের কাজে না গিয়ে অফিসে বসে কাজ করবে এই শর্তে পোস্টম্যান অপারেটর পদে পদোন্নতি নিতে পোস্টম্যানদের দিতে হয় ১৫ বা ২০ হাজার টাকা। ছাগলনাইয়া পোস্ট অফিসে জয়নাল আবেদিন পোস্টম্যান থেকে অপারেটর পদে পদোন্নতি নিতে সিবিএ নেতা ও অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামান্য কিছু দিয়েছেন বলে স্বীকার করে সংবাদ না লেখার অনুরোধ করেন। ফেনী পোস্ট অফিসের কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মুছা আলম কোন অনিয়মের সাথে সিবিএ’র নেতারা জড়িত নয় বলে দাবি করেন । ছাগলনাইয়া উপজেলা পোস্ট মাস্টার শফিকুর রহমানের নিকট অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। এই প্রতিবেদকের সাথে একান্তে কথা বলবেন বলেও জানান। ছাগলনাইয়া পোস্ট অফিসে অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে জানতে ডাক বিভাগের নোয়াখালী বিভাগীয় ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেলের কার্যালয়ের সুপার রুহুল আমীনের নিকট ফোন দিলে তিনি জানান এই সব অভিযোগ প্রমানিত হলে আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে ছাগলনাইয়া পোস্ট অফিসের অনিয়ম দূর করতে বদলিসহ সব ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।