
আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে রাজধানীসহ সারাদেশে বেড়েছে ছোট-বড় নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। এর মধ্যে অন্যতম হলো জাল টাকা তৈরি। জালনোট কারবারি চক্র নানা কায়দায় জাল নোট ছড়িয়ে দেয় রাজধানীসহ সারাদেশে। আর তাদের ধরতে বিভিন্ন কৌশলে জাল তৈরি করেছেন পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দারা।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন মার্কেটে বাংলাদেশি মুদ্রার নতুন টাকার নোট ছাড়া হচ্ছে। এ নতুন নোট ছাড়াকে পুঁজি করে জাল নোট কারিগর ও ব্যবসায়ীরা ব্যাপকভাবে তৎপর হয়েছে। আগামী ১১ জুন থেকে বাজারে নতুন নোট ছাড়া হবে। আর জাল নোট প্রস্তুতকারী সিন্ডিকেট দ্রুতগতিতে নতুন নোট সংগ্রহ করে নকল নোট তৈরি করতে সক্রিয় হয়েছে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, জাল নোট প্রস্তুতকারী চক্রের সদস্যরা গ্রেফতার হলেও আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে সহজেই ছাড়া পেয়ে যায়। তারা জামিনে মুক্ত হয়ে আবার একই অপরাধ করে যাচ্ছে। এর ফলে এ ধরনের অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলছে।
সূত্র জানায়, ঈদকে সামনে রেখে জালটাকা এবং বিদেশি মুদ্রা ছড়িয়ে দিতে দশটি সিন্ডিকেটে অন্তত দেড়শ প্রতারক কাজ করছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিপথগামী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর গোয়েন্দারা নজরদারি করছেন। প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ শেষে তাদের আইনের আওতায় আনা হতে পারে। এছাড়া একজন ‘নামধারী আইনজীবী’ আছেন এ তালিকায়।
সূত্র আরো জানায়, জাল নোট কারবারিরা ইতোমধ্যে জাল নোট ছড়িয়ে দিতে জেলায় জেলায় তাদের এজেন্ট নিয়োগ করেছে। তারা গোপনে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যাতে জালটাকা ছড়িয়ে দেয়া যায়, সে জন্য আগে থেকেই কারবারিরা নিজেদের লোকদের সঙ্গে চুক্তিও করেছে। এক লাখ টাকার বান্ডেল ১২ হাজার টাকায় বদল হবে। পাশাপাশি সিন্ডিকেটের কোনো সদস্য ধরা পড়লে জামিনের ব্যবস্থা করা, আটক পরিবারের খরচ বহন এবং গোয়েন্দারা কাউকে আটক করলে গডফাদারদের নাম গোপন রাখা। একইসঙ্গে জালনোটের অপরাধী সিন্ডিকেটে এবার নারী সদস্য সংখ্যা আরো বাড়ানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার চক্রের কয়েক সদস্যের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে, কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও রোজায় জালনোটের বিস্তার ঠেকাতে মানুষকে সচেতন করাসহ ব্যাংকগুলোকে বেশকিছু পদক্ষেপ নিতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটির পক্ষ থেকে রমজান মাসে নোট জাল চক্রের ওপর কঠোর নজরদারিসহ অভিযান পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ব্যাংকের শাখার প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আর একই সঙ্গে রমজানে জাল নোট প্রতিরোধে আসল ব্যাংক নোটের নিরাপত্তা বেশিষ্ট্যসম্বলিত ভিডিও চিত্র প্রচার করতেও ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বুধবার সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো এক সার্কুলারে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার ( মিডিয়া ) মাসুদুর রহমান বলেন, জালনোট কারবারিদের ব্যাপারে আমাদের নজরদারি রয়েছে। কোথাও কোনো তথ্য পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হবে।