মোতাহের হোসেন ইমরান : সোনাগাজী উপজেলায় ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ৩ লক্ষাধিক লোকের বসবাস। এত লোকের নিরাপত্তায় মাত্র ৭৯ পুলিশ। জনভোগান্তি কমাতে আরো থানা, পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের দাবী করেছে এলাকাবাসী। সোনাগাজী উপজেলায় মডেল থানার পাশাপাশি চর দরবেশ ইউনিয়নের আদর্শ গ্রামে তদন্ত কেন্দ্র ও মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় পুলিশ ক্যা¤প রয়েছে। সোনাগাজী মডেল থানায় ১ জন ওসি, ১জন ওসি তদন্ত, ৫ জন এসআই, ৯ জন এএস আই, ২ জন নারী এএস আই, ২৯ জন পুরুষ কনষ্টেবল ও ১ জন নারী কনষ্টেবল রয়েছে। আদর্শ গ্রাম তদন্ত কেন্দ্রে ১ জন পরিদর্শক, ১ জন এস আই, ৩ জন এএস আই ও ১০ জন কনষ্টেবল রয়েছে। মুহুরী প্রজেক্ট পুলিশ ক্যাম্পে ১জন এস আই, ২জন এএস আই, ১৩ জন কনষ্টেবল রয়েছে। সোনাগাজী মডেল থানার সেকেন্ড অফিসার (এসআই) হারুনুর রশিদ বলেন, এই উপজেলায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ড রোধকল্পে জনবল সংকট থাকায় থানা পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তার মধ্যে হত্যা, ডাকাতি, নারী নির্যাতন, ছিনতাইসহ জন-গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলোর তদন্ত কাজ এবং ওই মামলায় অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেফতার করতে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ। অত্র উপজেলায় যেভাবে যানবাহনের চাপ বেড়েছে ওইসব গাড়ির নিরাপত্তা বিধানসহ চলতি এইচএসসি ও আলিম পরীক্ষার ডিউটিতো আছেই। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স যাচাই-বাচাই, অস্ত্র, মাদক উদ্ধরের অভিযান, চাঞ্চল্যকর ঘটনার তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা, ভিআইপি নিরাপত্তা সহ বিভিন্ন মামলায় বিজ্ঞ আদালতে সাক্ষী তলবে ব্যস্ত থাকতে হয়। রাতের বেলা নিরাপত্তার জন্য পুলিশের ৫টি টিম ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় টহল দেয়। নবাবপুর ইউনিয়নের মজুপুর তাহেরা বেগম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তাঞ্জিরুল আজিম চৌধুরী জানান, সোনাগাজী উপজেলার আয়তনে বড়। বিশেষ করে সোনাগাজীতে অর্থনৈতিক অঞ্চল, সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হতে যাচ্ছে। ফলে এ উপজেলার গুরুত্ব আরো বেড়ে গেছে। এই এলাকায় ১টি থানার পাশাপাশি আরো ২-৩টি তদন্ত কেন্দ্র স্থাপন করা হলে নিরাপত্তা জোরদার করা যাবে। চরমজলিশপুর ইউনিয়নের চর গোপালগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মো: আকবর হোসেন বলেন, সোনাগাজী থানা থেকে আমাদের এলাকার দুরত্ব বেশি। ডাকাতি কিংবা কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে পুলিশকে খবর দিলেও পুলিশ আসতে সময় লাগে প্রায় ঘন্টা খানেক। আমাদের এই এলাকায় একটি তদন্ত কেন্দ্র স্থাপন করা হলে অপরাধ প্রবণতা অনেকটাই কমে যেত। সোনাগাজী পরিসংখ্যান অফিসের কর্মকর্তা পরিতোষ মজুমদার জানান, ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী সোনাগাজীর জনসংখ্যা ২লাখ ৬২ হাজার ৫৭০ জন। বর্তমানে এই সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মতিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: রবিউজ্জামান বাবু জানান, মাদক, ইভটিজিং, সন্ত্রাস, ডাকাতিসহ অপরাধমূলক কর্মকান্ড রোধকল্পে পুলিশের জনবল বাড়ানো উচিত। এ অল্প সংখ্যক পুলিশ বাহিনী দিয়ে এতবড় উপজেলায় পুরোপুরি অপরাধ দমন করা সত্যিই কষ্টকর। মুহুরী প্রজেক্ট পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো: মহসীন আলী জানান, এ ক্যাম্পের কোন নিজস্ব পরিবহন নেই, আবাসন সংকটও চরমে। এখনে কর্মরত পুলিশ সদস্যরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেষ্ট হাউজে থাকতে হয়। গাড়ি ভাড়া নিয়ে চলতে হয়, অপরাধীর কাছে পৌঁছতে সময়মত অনেক সময় গাড়িও পাওয়া যায় না। আদর্শ গ্রাম তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক মো: শাহজাহান জানান, আশ-পাশের অধিকাংশ সড়ক কাঁচা হওয়ায় একটু বৃষ্টি হলেই চলাচল করতে অসুবিধা হয়ে যায়। এই কেন্দ্রে কোন ধরণের আবাসন ব্যবস্থা নেই। নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় ভাড়া গাড়িতে চলতে হয়, যার কারনে প্রায় সমস্যায় পড়তে হয়, সময়মত গাড়ি পাওয়া যায় না। সোনাগাজী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ৭৯ জন পুলিশ নিয়ে ৩ লক্ষাধিক মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা খুবই কঠিন কাজ। হঠাৎ করে অফিসারদের বদলির কারনে থানায় জনবল সংকট দেখা দিয়েছে।তারপরও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ। প্রয়োজনীয় জনবলসহ নানা সমস্যা থাকলেও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ বাহিনী সজাগ রয়েছে।