বিভিন্ন মামলায় নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ মুচলেকা (বেলবন্ড) দিয়ে আসামিকে জামিন দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী, মুচলেকার সেই অর্থ আদালতকে দেবেন একজন জামিনদার। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই মুচলেকার টাকা আদালতে যাচ্ছে না।
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম, মুখ্য বিচারিক হাকিম, জেলা জজ আদালত ও মহানগর দায়রা জজ আদালতের একাধিক নথি থেকে এই তথ্য জানা গেছে।এসব আদালতে মাদকের মামলায় বেশির ভাগ আসামি জামিন নিয়ে পলাতক হয়ে গেলেও জামিনদারের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেননি আদালত।এ বিষয়ে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের সরকারপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) আনোয়ারুল কবির বাবুল বলেন, সাধারণত আদালত থেকে আসামিকে দুজন জামিনদারের জিম্মায় ও বিভিন্ন অঙ্কের টাকায় জামিন মঞ্জুর করা হয়ে থাকে। সেই মুচলেকার টাকা যদি আসামি পলাতক হয়ে যায়, তাহলে আদালত চাইলে জামিনদারের কাছ থেকে নিতে পারবেন। কিন্তু পলাতক আসামিদের ক্ষেত্রে আদালত থেকে সে টাকা নেওয়ার জন্য কোনো উদ্যোগ নেন না। তিনি জানান, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫১৪ ধারায় এই জামিননামার কথা বলা আছে। সেখানে কোনো আসামি পালিয়ে গেলে জামিননামার ধার্যকৃত টাকা দেওয়ার কথা রয়েছে।আনোয়ারুল কবির আরো জানান, ১৯৯০-এর দশকে আদালতে জামিননামার বন্ডের টাকা নেওয়ার বিধান থাকলেও বর্তমানে এ ধরনের কোনো টাকা নেওয়া হয় না। তিনি জানান, জামিননামার ধার্যকৃত টাকা আগে সরকারি কোষাগারে নেওয়া হতো। কিন্তু এখন সেটা হচ্ছে না।
মতিউল হাসান নামের এক বিচারপ্রার্থী বলেন, তিনি একটি চেকের মামলার আসামি। সেই মামলায় জামিন করাতে আইনজীবীকে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। আইনজীবী বলেছেন, জামিন দেওয়ার সময় বিচারক ১০ হাজার টাকা মুচলেকা দেওয়ার কথা বলেছেন, সেখানে টাকা দিতে হবে। কিন্তু এরপর বিভিন্নভাবে জানতে পারেন, আসলে সেই ধরনের কোনো টাকা দেওয়া হয় না।
ফৌজদারি মামলার আইনজীবী মুনজুর আলম জানান, জামিননামার টাকা আগে নেওয়া হলেও এখন নেওয়া হয় না। অনেক আইনজীবী মক্কেলের কাছ থেকে মুচলেকার টাকা নেন। কিন্তু আসলে সে টাকা দেওয়া লাগে না। এ ছাড়া পলাতক আসামিদের ক্ষেত্রে জামিননামার টাকা জামিনদারের কাছ থেকে নেওয়া হয় না। এতে আসামিরা জামিন নিয়ে সহজে পালিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে আদালতে আর আসে না।
মুনজুর আরো জানান, জামিননামার টাকা যদি আগের মতো নেওয়া হতো, তাহলে ভুয়া জামিনদারের সংখ্যা কমত ও আসামিরা আদালত থেকে বিচারকাজ মোকাবিলা করত। এতে সরকারের রাজস্ব বাড়ত।
এ বিষয়ে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতের বেঞ্চ সহকারী পারভেজ সুমন বলেন, আইনে জামিননামার টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে নেওয়া হয় না। মাদকের মামলার আসামিরা বেশির ভাগই পলাতক থাকে। তাদের অনুপস্থিতিতেই মামলার বিচারকাজ চালানো হয়ে থাকে।
‘আগে শুনেছি নেওয়া হতো। এখন এ আইনটা কঠোর করলে হয়তো আসামিরা জামিন নিয়ে কম পালাত।’ বলেন পারভেজ সুমন।