ফেনী-২ (সদর) আসনের বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী জয়নাল আবেদিন অভিযোগ করেন, সরকারী দলের নেতাকর্মীরা দিনদুুপুরে ভোট ডাকাতি করে বাক্স ভর্তি করেছে, বিএনপির নেতাকর্মীদের মারধর করেছে, এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। শহরের ফলেশ্বর গ্রামের নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, ‘এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশন, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ভোটের নামে লুটপাট হয়েছে। রীতিমতো ভোট ডাকাতি হয়েছে। কেন্দ্রে বিএনপির সমর্থকদের যেতে দেওয়া হয়নি। পথে পথে বাধা দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি হামলা-ভাংচুর ও মারধর করা হয়েছে। পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযানেও নেতাকর্মী কোথাও দাঁড়াতে পারেনি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এ প্রার্থী বলেন, নির্বাচন বর্জনের বিষয়টি কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত। তবে তার ফেনী-২ আসনে ব্যাপক জাল ভোট হয়েছে, সরকারী দলের লোকজন প্রশাসনের সামনেই ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্সে ঢুকিয়েছে। তিনি এ ভোট বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের দাবী জানান তিনি।

দুপুরে জেলা প্রশাসক ও রির্টানিং কর্মকর্তার কার্যালয় চত্বরে ফেনী-১ (ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম) আসনের বিএনপি দলীয় প্রার্থী রফিকুল আলম মজনু সাংবাদিকদের বলেন, গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছিল। কিন্তু ফেনী-১ নির্বাচনী এলাকা ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম এলাকার ভোটাররা কোন ভোট দিতে পারেনি। সরকার সমর্থক নেতাকর্মীরা ভোট কেন্দ্র দখল, জাল ভোট ও এজেন্টদের বের করে দিয়ে নিজেরাই ব্যালট পেপারে সীল মেরেছে। তিনি বলেন, ছাগলনাইয়া উপজেলার পূর্ব ছাগলনাইয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মহাজোট প্রার্থী ও জাসদ নেত্রী শিরীন আখতারের নিজের কেন্দ্র। এ কেন্দ্রে সকালে প্রথম দেড় ঘন্টায় প্রতি বুথে ২শ ৯৫টি ভোট কাষ্ট হয়েছে। কেন্দ্রে কোনো নারী ভোটারের উপস্থিতি না থাকলেও সেখানে আড়াইশর মত ভোট কাষ্ট হয়েছে যেটা কোন মানুষের পক্ষে দেয়া সম্ভবই না একমাত্র ভূত বা ফেরেশতা এসে দিতে পারে। 

তিনি বলেন, তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকার অনেক কেন্দ্র পরিদর্শন করে কোন কেন্দ্রেই ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট দেখতে পাননি। সকালে কেন্দ্রে গেলে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। রাতেই প্রশাসনের সহযোগীতায় ব্যালট পেপারে সীল মেরে ভোটবাক্স পূর্ণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার সমর্থকরা ভোট ডাকাতি করে ব্যালেট বাক্স ভর্তি করেছেন। তিনি এ আসনের ভোট বাতিল করে পুন:নির্বাচনের দাবী জানান।

ফেনী-৩ (দাগনভূঁঞা-সোনাগাজী) আসনের ধানের শীষের প্রার্থী আকবর হোসেনও তাঁর নির্বাচনী এলাকায় ভোট বাতিল করে পুনঃনির্বাচন দাবি করেন। রবিবার দুপুরে তিনি দাগনভূঁঞা পৌরসভার আলাইয়ারপুর নিজ বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান। তিনি এ নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচন হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এ নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছিল। কিন্তু বিএনপির এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে ভোট কেন্দ্র দখল, জাল ভোট প্রদান ও সীল মেরে বাক্স ভর্তি করেছে সরকার দলীয় কর্মীরা। দাগনভূঁঞা ও সোনাগাজী উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রায় ৩০ জন বিএনপি নেতকর্মীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। 

 আকবর হোসেন বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত গণগ্রেপ্তার অব্যাহত ছিল। তিনি এসবের তীব্র নিন্দা জানান। নির্বাচন বর্জনের বিষয়টি কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত। কেন্দ্র থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া হবে তাই মেনে নেয়া হবে।তবে তিনি ফেনী-৩ আসনের নির্বাচন বাতিল করে পুনঃনির্বাচন দাবি করেন।

বিএনপির প্রার্থীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুজজামান বলেন, জণগন স্বতস্ফুর্ত ভাবে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেছে। কোন অনিয়ম হয়নি। নির্বাচন ছিল শান্তিপূর্ণ। তবে ফেনী-১ ও ফেনী-২ আসনের দুই প্রার্থীর কিছু অভিযোগ পেয়েছেন। ফেনী-৩ আসনের কোন অভিযোগ পাননি। এ সব অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হবে।