সিভিল সার্জনের অস্বীকার
মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটপট করছে ভুক্তভোগী রোকসানা
জাকের হায়দার সুমন,
ছাগলনাইয়ার হতদরিদ্র এক প্রসূতিকে সিজার অপারেশন করার সময় পেটে গজ(ব্যান্ডেজের পাতলা কাপড়) রেখে সেলাই করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মৃত্যু যন্ত্রণায় মহিলাটি ছটপট করলে মুমূর্ষু অবস্থায় গতকাল রোববার স্থানীয়রা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে মহিলাটি ফেনী সদর হাসপাতালের সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কামরুজ্জামান ও ডাক্তার হারুন অর রশীদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে বলে হাসপাতালের আরএমও অসীম কুমার জানান। রোগীর স্বামী রিক্সা চালক মনির আহাম্মদ, প্রতিবেশী আবু তাহের বাবুল, এরশাদ উল্লাহ্ প্রেসিডেন্ট ও বাড়ীর মালিক ফকির আহাম্মদ জানান ২০১৪ সালের ৩০ জুলাই বাসা-বাড়ীতে ঝি’ এর কাজ করা রোকসানা আক্তার(২৮)’র প্রসব ব্যাথা উঠলে তৎকালীন জেলা সদরের এসএসকে রোড মহিপালের ইস্কয়ার ডায়াবেটিস এন্ড জেনারেল হসপিটালের গাইনী, প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ সার্জন ডাক্তার জাসরিন আক্তার(মিলি)’র তত্ত্বাবধানে ভর্তি করানো হয়। স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব না হওয়ায় সিজার করেন ডাক্তার মিলি। সিজারে রোকসানা একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেন। ওই বছরের আগস্টের ২ তারিখে ডাক্তার মিলি তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে বাড়ী পাঠান। কিছুদিন যাওয়ার পর পেটে ব্যাথা অনুভূত হলে রোকসানা ডাক্তার মিলির নিকট গেলে তিনি ব্যাথার ওষধ দেন। একইভাবে মাস-বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও ব্যাথা না সারলে মিলিকে জানালে মিলি তার এডভাইজে বলেন কোন ভারী কাজ করা যাবে না। এভাবে ৩ বছর পর্যন্ত পেটে ব্যাথা নিয়ে রোকসানা অবর্ণনীয় জীবন যাপন করে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নিকট গিয়ে লাখ লাখ টাকা ব্যাথার জন্য ব্যয় করেও কোন প্রতিকার পাননি। সম্প্রতি রোকাসানার পায়ুপথে সামান্য পরিমাণ গজ পর পর কয়েকদিন বেরিয়ে আসলে তিনি তা কেটে রেখে ডাক্তারকে জানান। ডাক্তার এটি বিশ^াস না করে পুনরায় ব্যাথার ওষধ দেন। গেল শুক্রবার রোকসানার পায়ুপথ দিয়ে ৬ ইঞ্চি লম্বা গজ বেরিয়ে আসলে তিনি তা না কেটে ডাক্তারকে ছবি তুলে দেখান। এরপর থেকে ডাক্তার মিলি তাদের আর ফোন ধরেন না। ফেনীতে কোন হাসপাতালে ডাক্তার মিলির সাক্ষাত দিবেন তা জানতেও পারেননি। ব্যাথার যন্ত্রণায় ছটপট করলে পায়ুপথের দৃশ্যমান গজসহ গতকাল রোববার ছাগলনাইয়া স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান ডাক্তার নুরুল আমীন জাহাঙ্গীরের নিকট গেলে তিনি জুরুরী ভিত্তিতে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। বর্তমানে ফেনী সদর হাসপাতালের ২য় তলার মহিলা বিভাগের ২নং ওয়ার্ডের ২নং বেডে ভর্তি রয়েছেন রোকসানা। তার অপারেশনের জন্য সিটি স্ক্যানসহ আনুসাঙ্গিক কাজ শুরু হয়েছে। আবাসিক মেডিকেল অফিসার অসীম কুমার জানান অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার আগ পর্যন্ত বলা যাবে না অপারেশনটি মাইনর না মেজর। অভিযোগের বিষয়ে জানতে ইস্কয়ার হাসপাতালে গেলে হাসপাতালটির কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ছাড়পত্রে লেখা রয়েছে পরিচালনায় ডাঃ হায়দার ক্লিনিক (প্রাঃ) হাসপাতাল। হায়দার ক্লিনিকের পরিচালক সায়েমের নিকট এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে চাননি। ডাক্তার মিলির ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার জানতে চাইলে তাও দেননি তিনি। ইস্কয়ার হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক বর্তমানে ইস্কয়ার ল্যাবের পরিচালক ফারুকের নিকট জানতে চাইলে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান। অভিযুক্ত ডাক্তার জাসরিন আক্তার মিলির নিকট মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি রোগীর অপারেশনের কথা স্বীকার করলেও পেটে গজ রাখার বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি অসুস্থ্য অবস্থায় ঢাকার বাসায় বিশ্রামে আছেন, পরে কথা বলবেন জানিয়ে ফোন কেটে দেন। কিছুক্ষণ পর তার একজন প্রতিনিধি এই প্রতিবেদককে ফোন করে সংবাদটি প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন। ফেনী বিএমএ’র সভাপতি ডাক্তার সাহেদুল ইসলাম কাউছার জানান ঘটনাটি যদি সত্যি হয় তাহলে তা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অমানবিক। এই বিষয়টি তিনি সর্বচ্চ মহলে জানাবেন বলেও জানান। ফেনীর সিভিল সার্জন ডাক্তার হাসান শাহ্রিয়ার কবির রোগীর পেটে গজ থাকার বিষয়টি পুরোপরি অস্বীকার করে সমকালকে জানান গজ থাকলেও পায়ুপথ দিয়ে এটি বের হওয়ার কোন যুক্তিকতা নেই, এটি যদি হয় তাহলে ডাক্তারি শাস্ত্র ভুল বলে তিনি দাবি করেন। ফেনী হাসপাতালের ডাক্তার হারুন সমকালকে জানান তারা মেশিন দিয়ে পায়ুপথ পরীক্ষা করে কিছু পাননি। রোগীর কথা অনুযায়ী কিছু রয়েছে মনে করে সিটি স্ক্যান করতে পাঠিয়েছি বলেও হারুন জানান। কিছু একটা থাকার কথা তিনি স্বীকারও করেন। পায়ুপথে গজ বের হওয়ার ছবি তুলেছেন রোকসানার বাড়ীর মালিক ফকিরের মেয়ে তাহমিনা আক্তার। সে সমকালকে জানায় এটি বের হওয়া দেখে টান দিলে রোকসানার ব্যাথার শোর চিৎকারে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে। রোকসানা ফেনী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সমকালকে জানায় ডাক্তার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ইনজেকশন দিলে তা আবার ভিতরে ঢুকে যায়। রোকসানার পায়ুপথে গজ আটকে থাকার ছবিটি সমকালের নিকট সংরক্ষিত রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক ডাক্তার আলা উদ্দিন মজুমদার সমকালকে জানান এই জঘন্য কাজের জন্য তিনি ডাক্তারকে ভৎসনা করেন এবং ডাক্তার মিলির বিরুদ্ধে রোগীর স্বজনকে মামলা করার পরামর্শ দেন। রোকসানার স্বামী রিক্সা চালক মনির আহাম্মদ সমকালকে জানান সে ও তার স্ত্রী ৪ সন্তান নিয়ে ২০ বছর ধরে ছাগলনাইয়া পৌরসভার পশ্চিম ছাগলনাইয়া ওয়ার্ডের সাতবাড়ীর রৌশন আলী মুন্সি বাড়ীর ফকিরের বাড়ীতে ভাড়া থাকেন। তার স্ত্রীর ভুল চিকিৎসা করায় পরবর্তী চিকিৎসা করাতে গিয়ে তার শেষ সম্বল যেই রিক্সাটি ছিল তাও বিক্রি করে দিয়েছে। গত ৩ বছরে এই পর্যন্ত তার সাড়ে ৩ লাখ টাকা চিকিৎসা ব্যয় হয়েছে। সব টাকাই সুদের উপর নেয়া বলেও মনির জানায়। তিনি অভিযুক্ত ডাক্তারের সুষ্ঠু বিচার চান।
নায়িকা দীঘির বিরুদ্ধে কোটি টাকার মামলা করবেন
স্বনামধন্য নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত মুক্তি প্রতীক্ষিত ছবি ‘তুমি আছো তুমি নেই’র পোস্ ...বিস্তারিত