সৌরভ পাটোয়ারী, ফেনী, ৫ মার্চ, ২০১৮,
দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ফেনীতে বেড়েছে পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর ব্যাপক ধরপাকড়। ফলে ফেনীর একমাত্র জেলা কারাগারে বন্দি এখন ধারণমতার প্রায় চার গুণ বেশি। অতিরিক্ত বন্দির চাপে কারা কর্তৃপ হিমশিম খাচ্ছে।
ফেনী জেলা কারাগার সূত্র জানায়, জেলা কারাগারে ১৭২ জন বন্দির ধারণমতা থাকলেও সেখানে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে ৭০৫ জন বন্দিকে। এর মধ্যে একজন শিশু, চারজন কিশোর ও ১০ জন নারী বন্দি রয়েছে। অতিরিক্ত দুর্ভোগে রয়েছে শিশু-কিশোর ও নারী বন্দিরা। গাদাগাদি করে থাকার কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগব্যাধি।
ফেনীর বর্তমান কারাগারটি ফেনী সরকারি কলেজের পাশে অবস্থিত। ১৮৭৬ সালে মাত্র দুজন হাজতি রাখার জন্য সেখানে একটি ব্যারাক নির্মাণ করা হয়। পরে সেটি ফেনী মহকুমা কারাগারে উন্নীত হয়। ১৯৮৪ সালে ফেনী জেলা হওয়ার পর বিভিন্ন পর্যায়ে স¤প্রসারণ করে এ কারাগারের কয়েদি ধারণমতা করা হয় ১৭২ জনে।
৫ মে ২০১৮ সোমবার পর্যন্ত বন্দি ছিল ৭০৫ জন, যা ধারণমতার প্রায় চার গুণ বেশি। এক একর জমির ওপর স্থাপিত এ কারাগারে রয়েছে একটি চারতলা ভবন, দুটি একতলা ব্যারাক।
জেলা গণপূর্ত বিভাগ সূত্র জানায়, ফেনী জেলা কারাগার নির্মাণের জন্য ২০০৬ সালে ফেনী সদর উপজেলার কাজিরবাগ ইউনিয়নের নতুন রানীরহাট বাজারের পাশে মালিপুর ও সোনাপুর মৌজার সাড়ে সাত একর জমির ওপর স্থান নির্ধারণ করা হয়। ২০০৮ সালে এ জেলা কারাগার প্রকল্প পাস করা হয়। ২০১১ সালে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৩১ কোটি টাকা।
এর মধ্যে কারাগার এলাকার সীমানাপ্রাচীর, পেরিমিটার ওয়াল (উঁচু দেয়াল) এবং আটটি ভবন রয়েছে। ভবনসমূহের মধ্যে রয়েছে তিনটি পুরুষ ব্যারাক ভবন, একটি মহিলা ব্যারাক ভবন, একটি মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত কয়েদি সেল, একটি হাসপাতাল ভবন, একটি কারারী ভবন এবং একটি কিশোর কয়েদি ভবন।
অপর একটি সূত্র জানায়, বন্দিদের মধ্যে মাদকাসক্ত, মানসিক রোগীসহ দুর্ধর্ষ প্রকৃতির বন্দিও রয়েছে। নিরাপত্তার লক্ষে তাদের জন্য পৃথক সেল পর্যাপ্ত নয়। দিনের বেলা হাঁটা-চলার মতো জায়গা এবং মহিলা ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় নারী কয়েদিদের নানা দুর্ভোগে পড়তে হয়।
ফেনী জেলা কারাগারের জেলার শংকর কুমার মজুমদার দৈনিক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ধারণমতা ১৭২ হলেও ৭০৫ জন বন্দি থাকতে তেমন অসুবিধা হয় না। নতুন কারাগার নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত এতটুকু কষ্ট বন্দিদের মেনে নিতে হচ্ছে। তবে স্থায়ী চিকিৎসকের অভাবে বন্দিদের চিকিৎসাসেবায় একটু সমস্যা হচ্ছে। তা ছাড়া মশা নিধনসহ অন্যান্য সমস্যা স¤পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপরে কাছে প্রতি মাসের প্রতিবেদনে জানানো হচ্ছে।
স¤প্রতি জামিনে মুক্তি পাওয়া একাধিক রাজনৈতিক নেতার (হাজতির) সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলখানা বন্দিতে ঠাসা। তিল ধারণের স্থান নেই। রাজনৈতিক ধরপাকড় আর পুলিশের গণগ্রেপ্তারে কারাগারে প্রতিদিনই ঢোকানো হয় নতুন বন্দি। থানা-পুলিশের নিয়মিত গ্রেফতার ও বিশেষ অভিযান চলছে। এসব অভিযানে আটকদের প্রায় সবাই বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মী।
অন্যদিকে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, বোমাবাজ, চোর-ডাকাত আর খুনিদের সঙ্গে ভাগ্য বিড়ম্বনায় জেল খাটছেন নিরীহ অনেকেই।
বিপুলসংখ্যক বন্দির কারণে কারগারে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও আনুষঙ্গিক সুবিধা পাচ্ছে না বন্দিরা। টয়লেটে যেতে হয় লম্বা লাইন দিয়ে। খাবারের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বন্দিদের। আগে থেকেই কারাগারগুলোতে ধারণমতার দ্বিগুণ বন্দি ছিল। তখনো তাদের থাকা-খাওয়া ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে নানামুখী সমস্যায় পড়তে হয়েছে বলে কারা কর্তৃপরে একটি সূত্র জানায়।
ফেনী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, কার্যাদেশ প্রদানের দুই বছরের নতুন কারাগারের সীমানাপ্রাচীর ও পেরিমিটার ওয়ালের (উঁচু দেয়াল) ৯৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ভবনসমূহের ফাইল টেস্ট স¤পন্ন হয়েছে। চলতি বছরের মে মাসে ফেনী অদুরে রানীহাটে নতুন কারাগারে বন্দি স্থানান্তর করতে আর অসুবিধা নেই ।