বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির (আইসিএসটি) গণিত বিভাগের শিক্ষক পেয়ার আহম্মদ মজুমদারের মৃত্যুর ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক শ্রেণির লোকজন ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছে। তাঁরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন নামে-বেনামে ভুয়া আইডি থেকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের পাঁয়তারা করছে। এমন অভিযোগে সোমবার সন্ধ্যায় শহরের একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে আইসিএসটি শিক্ষক ও পরিচালকদের উপস্থিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আরিফ আল মাহমুদ।লিখিত বক্তব্যে তিনি দাবি করেন- তাঁর প্রতিষ্ঠানে আবাসিকের শিক্ষক পেয়ার আহম্মদ মজুমদার গত ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনাকে পুঁজি করে একটি অসাধু চক্র প্রাতিষ্ঠানিক সুনামকে হেয় প্রতিপন্ন করতে এবং চলমান রোহিঙ্গা ইস্যুকে সামনে এনে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে নামে-বেনামে বিভিন্ন ভুয়া আইডিতে। উক্ত মৃত্যুর ঘটনায় ফেনীতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে একটি ধর্মান্ধ গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে মানববন্ধন ও মিছিল সমাবেশের ডাক দিয়েছে। কে বা কারা ডাক দিয়েছেন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে মনগড়া অপপ্রচার চালাচ্ছেন এ বিষয়ে কেউ কিছুই জানেন না। এমনকি অধ্যক্ষ ও কলেজ কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য না নিয়েও অধ্যক্ষের বরাত দিয়ে মিথ্যা কল্পকাহিনী প্রচার করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।তিনি বলেন, প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে মৃত্যুর দিন সকালে নিহত শিক্ষক পেয়ার আহম্মদ মজুমদার গোসল করে পাইপে কাপড় শুকোতে দেয়ার সময় গোঙ্গানীর মতো শব্দ করে আমাকে ধরেন বলে চিৎকার করেন। একই রুমে থাকা সহকর্মী সুকান্ত বড়–য়া ও মোস্তাফিজুর রহমান তাঁকে ধরতে যান। এ সময় তাঁর শরীরে ঝাঁকুনি অনুভব করে সুকান্ত বড়–য়া প্রাথমিকভাবে ধারণা করেন ইলেকট্রিক শকে এরকম হচ্ছে। তাই তিনি দ্রুত সার্কিট ব্রেকার বন্ধ করতে রুমের বাইরে করিডোরে যান। এ সময় অপর শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান লক্ষ্য করেন ইলেকট্রিক সার্কিট ব্রেকার বন্ধের আগেই পেয়ার আহমদ দাঁড়ানো অবস্থা থেকে চিত হয়ে মেঝেতে পড়ে যান। পরে তাঁরা দুইজন মিলে ওই হোস্টেলে অবস্থানরত শিক্ষক ও ছাত্ররা উদ্ধার করে ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর সংবাদ পরিবারকে জানানো হয় এবং ময়নাতদন্ত রিপোর্টের জন্য সহযোগিতা করে উপস্থিত কলেজের কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।এ ঘটনাকে পুঁজি আইসিএসটির সম্পর্কে ভাবমূর্তি নষ্ট করার কিছু কুচক্রী ও স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য অপপ্রচার করে সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামার সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। এমনকি অধ্যক্ষের বরাত দিয়ে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ নিয়ে সুকান্ত বড়–য়ার সাথে পেয়ার আহম্মদের দ্বন্ধ চলছিল এমন মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। এ ব্যাপারে কোনো মিডিয়া কর্মী অধ্যক্ষের সাথে কোনো কথা বলেননি এবং অধ্যক্ষের জানামতে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ নিয়ে কোনো দ্বন্ধ ছিলনা বলেও দাবি করেন।লিখিত বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, কেউ যদি অপরাধ করে থাকে তবে তাকে অপরাধের শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে। কিন্তু সেটা আইনানুযায়ী। তাই তিনি কুচক্রী ও স্বার্থান্বেষী মহলের দেয়া মিথ্যা ও বানোয়াট মনগড়া কোনো তথ্য দিয়ে মানুষের প্রতি বিভ্রান্তি না ছড়াতে সাংবাদিকসহ প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের সহযোগিতা কামনা করেন এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির লক্ষ্যে মিথ্যা অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান।সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন আইসিএসটির অধ্যক্ষ ও নিহত শিক্ষকের রুমমেট মোস্তাফিজুর রহমান।এ সময় ফেনীতে কর্মরত সাংবাদিকরাসহ পুলিশ প্রশাসনের লোকজনসহ কলেজের পরিচালক, শিক্ষকম-লী উপস্থিত ছিলেন।প্রসঙ্গত; নিহত পেয়ার আহাম্মদ মজুমদার (ইন্সপেক্টর আর এস পদে) কর্মরত ছিলেন। তিনি পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের মনিপুর গ্রামের বাসিন্দা ও এক সন্তানের জনক।